Pages

Friday, May 9, 2014

মাশরুম চাষের নানা সমস্যা

মাশরুম চাষের নানা সমস্যা
-মোহাম্মদ মাহবুব আলম

মাশরুমের দুরবস্থা নিয়ে একটি অশ্রুবিজড়িত লেখা লিখে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি। লেখাটি কয়েকটি দৈনিকে ছাপা হয়েছিল। লেখার সঙ্গে আমার -মেইল অ্যাড্রেস থাকাতে আমি অনেক মেইল পেয়েছি। অনেকেই বলেছেন_ সমস্যার কথা বলেছেন ভালো কথা, কিন্তু সমাধানের পথ কী? এদিকে মালয়েশিয়ায় আমার বর্তমান আবাসস্থল চেরাফে অবস্থানকারী আমার স্বজনরা বিশ্বাসই করতে পারছে না আমি মাশরুম ব্যবসা বাদ দিয়ে মালয়েশিয়া চলে এসেছি। গতকাল আমার বন্ধু আমাকে এখানকার একটি চেইন শপে নিয়ে গিয়েছিল। টেসকো চেইনশপ। বলা যায় আমাদের চারটি বসুন্ধরা সিটিকে অনায়েসে এখানে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। টেসকো চেইন শপে আমি বিভিন্ন রকম মাশরুম দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আমি মালয়েশিয়া এসেও মাশরুম ভুলতে পারছি না।

আমি একজন সাধারণ মাশরুম চাষি। আমি কি পরামর্শ দেব সরকারকে? এছাড়া আমি কৃষি বিভাগের কাউকে চিনি না। বিভাগের কোথায় কোন প-িত কি দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে সেটি জানা থাকলে ভালো হতো। কিন্তু একজনকে চিনি, যিনি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করছেন। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে তাকে ভালোভাবে ঠাহর করতে পারছি না, তবে এ বিশ্বাস আছে তিনি পাহাড়ের চূড়ায় বসে আমাদের শস্যে ভরা সবুজ-শ্যামল দেশটি দেখছেন। হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক তিনি আমাদের অগি্নকন্যা মতিয়া চৌধুরী। নাম বিশেষণে কন্যা শব্দটি থাকলেও তিনি আমার কাছে মায়ের মতো। শুনেছিলাম প্রকল্পকালে তাকে সাভারে আনা হবে। ভেবেছিলাম এই সুবাদে আমার নিরন্তর পরিশ্রমের মাশরুম ফার্মে হয়তো এই মহান মানুষটির পদার্পণ হবে। কিন্তু হয়নি। কারণ দায়িত্বপ্রাপ্তি লোকদের কারও মাথায় মাশরুম ছিল না, ছিল অন্যকিছু। লেখাটি যখন তৈরি করেছি তখন তার কথাই বারবার আমার মনস্পটে ভেসে উঠছে। তিনি শুধু আমাদের কৃষিমন্ত্রী নন, তিনি আওয়ামী ঘরানার নির্ভেজাল সাদামাটা মাটির মানুষ, আওয়ামী লীগের একজন কা-ারি। তিনি মন্ত্রী না থাকলে আমি একজন সাধারণ মাশরুম চাষি লেখাটি লিখতাম না। আমার আগের লেখাটি ছাপা হওয়ার পর আমাদের মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তারা কি করেছে সেটিই আমাকে আজকে আবার লিখতে বাধ্য করল বটে। আমার আগের লেখাটি যেদিন ছাপা হয় সেদিন বিকেল ৫টায় তিনজন অস্ত্রধারী মাস্তান মাশরুম অফিসে এসে প্রকল্প পরিচালককে খোঁজে এবং প্রকল্প পরিচালককে না পেয়ে অফিস পিয়নকে তার পিস্তলটি দেখিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্প পরিচালক ঠিকমতো অফিস করে যাচ্ছে, আর কোন মাস্তান আসেনি। আমি মাশরুম কেন্দ্রের সব মানুষকে হাড়ে-হাড়ে চিনি, আমার কাছে বিষয়টি জলের মতোই পরিষ্কার। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বুদ্ধিমান(?) অফিসারটি প্রকল্প পরিচালক অফিসে না থাকা অবস্থায় মাস্তানদের শোডাউন করিয়ে প্রকল্প পরিচালককে ভয়ভীতি দেখানোর আয়োজন করেছে এবং সম্ভবত তাকে খেপিয়ে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভীতু কাপুরুষ আবার অবেলায় বুদ্ধিমান প্রকল্প পরিচালক সেটি করার মতো দুঃসাহস দেখায়নি। সাবেক প্রকল্প পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত সালেহ আহমেদ সাহেব সাভারেই থাকেন, তার নিনিয়ানগিরিও উল্লেখ করার মতো। জাতীয় একটা প্রতিষ্ঠানের এখন তিনজন অফিসার, তারা সবাই অকর্মন্য এটি বললে এটি সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে। তাই বিশ্বাস করার জন্য একটু ভিন্নভাবে বলি : মাশরুম একটি বিশাল স্রোতস্বিনী নদী আর এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা কেউ সাঁতার জানে না। যে প্রতিষ্ঠানে প্রচুর গবেষণার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস করার সময় থিসিসের জন্য কোন এক্সপেরিমেন্ট করেনি এবং একইভাবে কোন এক্সপেরিমেন্ট ছাড়া বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাতারাতি পিএইচডি ক্রয় করে সেখানে ভালো কিছু আর হতে পারে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পাঠ শেষ করা কেউ যখন কোন প্রকল্পে কাজ করতে পারে না তখন বুঝতে হবে সেখানে ভালো কিছু হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পাস করা কোন সুন্দরী মেয়ে যখন চোখের জল ফেলে কোন প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কের কালিমা দিয়ে যায় তখন সেখানে আর ভালো কিছু হতে পারে না। অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ছাড়া আর পবিত্রতা না থাকলে সেখানে আর যাই হোক মাশরুম হবে না। মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে কেন মাশরুম এগোতে পারেনি, কেন মাশরুম ভালো কিছু ইনোভেট করতে পারেনি? কারণ এদের মাথায় মাশরুম নেই। এদের মাথাটা ফাঁকা নয়, সেখানে বিভিন্ন অশিক্ষা আর নষ্টামি দিয়ে ভরা। অনেক মানুষকে এরা পথে বসিয়েছে, আমার মতো কেউ প্রতিবাদ করেনি। একটু ভিন্ন পটভূমিতে নির্মিত হঠা বৃষ্টি সিনেমা দেখতে গিয়ে হঠা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু সিনেমাটি পুরস্কৃত হয়েছিল। কিন্তু এই হঠা পিএইচডি কোন কাজে লাগবে সেটি বুঝতে পারছি না। এরকম ডিগ্রি অর্জন করার মানে নিজেকে নিজে ঠকানো, আর যে নিজেকে ঠকায় সে অন্যকে কি করবে? এই লোকটি প্রকল্প চলাকালে বিভিন্ন ইতরামিতে নিমজ্জিত থাকত, বিভিন্ন সময় সে বিভিন্ন ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে শুধু প্রকল্পের সাধারণ মজুরদের ঠকানোর জন্য। সে নাটকের তিনি একাই নাট্যকার এবং একাই অভিনেতা। শুধু এই একটি মাত্র লোকের জন্য এখানকার বাকি লোকগুলো কলুষিত হয়েছে। সাবেক প্রকল্প পরিচালক সালেহ আহমেদ একজন ভালো মানুষ ছিলেন, তিনি এই লোকটির নোংরামির জন্য ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি, পরে তার আর মাথা ঠিক ছিল না। একজন চাষি হিসেবে আমার একটি পরামর্শ মাশরুমের জন্য উদারমনা মেধাবী লোক দরকার যার খামারবাড়ীতে এবং সচিবালয়ে কোন আত্মীয় নেই। দায়িত্ব এবং জবাবদিহিতা না থাকলে এই কম্ম সফল হবে না। ৫০ কোটি টাকা শেষ করে সাবেক প্রকল্প পরিচালক সালেহ আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ সভায় বলেছেন_ এই দেশ মাশরুম চাষের জন্য উপযুক্ত নয়, আর একজন প্রকল্প শেষ করে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত মাশরুম কর্মসূচির (জাবরকাটা প্রকল্প) পরিচালক হয়ে এবং বাটন মাশরুমের বিশাল আয়োজনে ব্যর্থ হয়ে বলছেন এই দেশে বাটন মাশরুম হবে না। এসব দায়িত্বহীন লোকদের আমরা আর এসব কাজের জায়গায় দেখতে চাই না। দায়িত্বজ্ঞানহীন এসব অসফল কৃষিবিদদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একটি গল্প মনে পড়ছে। বলছি শুনুন, আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণীর ঘটনা। অঙ্ক ক্লাস, বিএসসি স্যার খুব কড়া। সবাইকে সরল অঙ্কটা বুঝিয়েই ছাড়বেন। তিনি বললেন সমস্যা হলে আমি দশবার বুঝিয়ে দেব, কিন্তু পারতে হবে। পাশেই বসা হাদারাম এক বন্ধু বিপদ আসন্ন দেখে স্যারকে বলল, স্যার দ্বিতীয় লাইনের প্রথম বন্ধনীর কাজটা একটু বুঝিয়ে দেবেন কি? স্যার ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন_ এবার বুঝেছ? এবার হাদারাম বলল, স্যার চতুর্থ লাইনের গুণ ও ভাগের কাজটি আবার একটু যদি বুঝিয়ে দিতেন। স্যার বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু এতেও হাদারাম ক্ষান্ত হলো না। সে আরও কয়েকবার সরল অঙ্কের বিভিন্ন জায়গায় ভালো করে বুঝে নিলেন। অবশেষে হাদারাম নিশ্চুপ। স্যারের দ্বিধা কাটে না। ক্লান্ত স্যার জিজ্ঞেস করলেন_ এই যে এত করে অঙ্কটা বুঝে নিলা, বলত কি বুঝলা? হাদারাম যথেষ্ট স্পষ্ট স্বরে শোধাল- বুঝলাম আমার দ্বারা এটি সম্ভব নয়। ছোট হাদারামের কথায় হেসেছিলাম আজ বড় হাদারামদের কথায় কান্না পায়।

[লেখক : মালয়েশিয়া প্রবাসী মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা]




No comments:

Post a Comment