নেপালে দারিদ্র থেকে মুক্তির একটি ভিন্নধর্মী পথ
মাশরুম চাষ এখন এতোটা লাভজনক যে, বেঁচে থাকার জন্য সরকারী চাকুরী, না
হয় বিদেশে কাজের খোঁজে যাবার যে ধারণা রয়েছে, সেগুলিকে চ্যালেঞ্জ
জানাচ্ছে।
কাঠমুন্ডু থেকে খবর দক্ষিণ এশিয়ার জন্য লিখেছেন কোস কৈরালা:
ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পল্লী উন্নয়ণ শিক্ষা বিষয়ে স্বর্ণপদকসহ
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া ৪০ বছরের রঞ্জন বিনায়ক পাশা তাঁর বর্তমান মাশরুম
চাষ নিয়েও সমানভাবে গর্বিত, যা তিনি দুই বছর আগে কাঠমুন্ডু উপত্যকার পাশে
চোভার নামক এক স্থানে শুরু করে ছিলেন।
পাশা খবর দক্ষিণ এশিয়াকে বলেন, “অন্য অনেকের মতো, হয় সরকারি চাকুরীতে
যোগ দেয়া, না হয় কাজের সন্ধানে বিদেশে যাবার জন্য অনেক চাপ ছিলো আমার
উপর। কিন্তু, আমি স্থির সংকল্প ছিলাম নিজের জন্য নতুন কোন উদ্ভাবনী ব্যবসা
চালু করা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মাশরুম চাষ করার, কেননা এতে খুব একটা
বিনিয়োগের দরকার হয় না”।
এই উদ্যেগের সহায়তায় তিনি এখন ছয় সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের
পাশাপাশি কিছু অর্থ সঞ্চয়ও করছেন। এমনকি তার দু’জন কর্মীও রয়েছে।
মাশরুম এখন তার জীবনে আয়ের উৎস হবার পাশাপাশি তাঁকে আত্মনির্ভরশীলও করে
তুলেছে। সেই সাথে, নেপালিদের মাঝে জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারি চাকুরী,
না হয় কাজের জন্য বিদেশ চলে যাবার যে প্রচলিত ধারণা রয়েছে, সেটির প্রতি
একধরণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
পাশা বলেন, “যদি আপনি এখন এক লাখ নেপালি রুপি (মার্কিন ডলার ১১,৫৫৮)
খাটাতে পারেন, তাহলে আগামী চার মাসের মধ্যে তা আপনাকে তিন লাখ নেপালি রুপির
(মার্কিন ডলার ৩৪,৭৬৫) বেশি এনে দেবে। তাহলে কেন আপনি সামান্য কাজের জন্য
বিদেশে যাবেন?”
২০১১ সালের শুমারি
অনুযায়ী ১৯ লাখের বেশি নেপালি যুবক বিদেশে কাজ করছে। যাদের বেশিরভাগ
উপসাগরীয় অঞ্চল এবং মালয়েশিয়াতে স্বল্প মজুরীর অধিক শ্রমের নিম্নমানের
কাজে নিয়োজিত।
মাশরুম খামারে একটি ছোট সুফল
এক বিশেষজ্ঞের মতে, স্থানীয় বাজারে মাশরুমের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
ছত্রাক জাতীয় এক উদ্ভিদ প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ এবং একই সাথে
বহুমূত্র রোগের ওষুধ হিসাবেও বহুল ব্যবহৃত।
কৃষি প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের(সিএটিটি) প্রতিষ্ঠাতা কেসরি লক্ষী
মাননধরের হিসাবে শুধুমাত্র কাঠমুন্ডু উপত্যকাতেই প্রতিদিন প্রায় চার টন
মাশরুম খাওয়া হয়।
১৯৯২ সালে জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে অবসর নেয়ার পর, মাননধর
মাশরুম চাষের উন্নয়নে সিএটিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাবেক এই উদ্ভিদ রোগ
বিশেষজ্ঞ স্মরণ করে জানান, ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে কাঠমুন্ডুতে প্রায় ৬০০ চাষী ছিলো।
মাননধর খবরকে বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে মাশরুমের চাহিদা বেড়েছে এবং শুধু
কাঠমুন্ডু উপত্যকায় মাশরুম চাষের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
উপত্যকার বাইরেও মাশরুম চাষীর সংখ্যা সমানভাবে বেড়ে চলছে।
সিএটিটি’র তথ্য অনুযায়ী, মাশরুম চাষের প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ
দেখাচ্ছে শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বিদেশ ফেরত নাগরিকেরা। এছাড়া,
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকার মাশরুম চাষের প্রতি গরীব মানুষকে আগ্রহী
করে তোলার চেষ্টা করছে।
মাননধর -এর মতে, নেপালের চাষীরা তিন ধরণের মাশরুম চাষ করে থাকে: ওয়েস্টার, হোয়াইট বাটন এবং সিতাকি।
তিনি বলেন, “আমি নিজে সিতাকি ধরণের মাশরুমের উপর গবেষণা করেছি এবং ২০০৩
সাল থেকে চাষীদের মধ্যে ছত্রাক বিতরণ করে আসছি। দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে এই ধরণের উচুঁমানের মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা
রয়েছে”।
ললিতপুর জেলার ইমাদল এলাকার মাশরুম চাষী হরি শ্রেষ্ঠা জানান, সরকারের উচিৎ মাশরুম চাষীদের আরো বেশি করে সহায়তা দেয়া।
শ্রেষ্ঠা আরো বলেন, “খুব ভালো হতো যদি সরকার দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দিয়ে
একটু সহায়তা করতো”। তিনি জানান, কাঠমুন্ডুর বাইরের কৃষকেরা মাশরুম বিপনন
করার ক্ষেত্রে খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা অগ্রাধিকার ভিক্তিতে সাধারণ চাষীদেরকে অর্থকরি মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সহায়তা করছে।
কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা বৈকুণ্ঠ অধিকারী
বলেন, “সরকার বিভিন্ন জেলায় মাশরুম চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং বীজ
বিতরণ করছে”।
তিনি আরো বলেন, “শুধু তাই নয়, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দরিদ্র কৃষকদের জন্য ঋণের পরিধিও বাড়িয়েছে”।
Source: http://khabarsouthasia.com
No comments:
Post a Comment