Pages

Tuesday, May 20, 2014

মাশরুম খান, রোগ থেকে বাঁচুন

মাশরুম খান, রোগ থেকে বাঁচুন


 মাশরুম খান, রোগ থেকে বাঁচুন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় বর্তমানে একটি পরিচিত নাম হল মাশরুম। যদিও কয়েক বছর আগেই মাশরুম খুব জনপ্রিয় কোন সবজ ছিল না। এর ব্যাপক চাষ এবং সহজলভ্যতাই মাশরুমকে আমাদের খাদ্য তালিকায় ঠাঁই পেতে সাহায্য করেছে। 

মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি হালাল সবজি। এর বিশেষ দিক হচ্ছে এতে শর্করা ও চর্বির পরিমাণ খুব কম এবং মানব দেহের প্রয়োজনীয় আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি। 



প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুম পাউডার ২৫-৩৫ ভাগ উন্নতমানের আমিষ, ১০-১৫ ভাগ ভিটামিন ও খনিজ লবণ, ৪০-৫০ ভাগ শর্করা ও আঁশ এবং ৪-৫ ভাগ চর্বি আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। 

মাশরুম শরীরের জমাকৃত কোলেস্টেরল মুক্ত করে এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ, ক্যান্সার, মেদভুঁড়ি, জন্ডিস, ডেঙ্গুজ্বর, প্রভৃতি রোগের প্রতিরোধক, নিরাময়ক বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। 

মাশরুম মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে এটি জনপ্রিয় মূল্যবান খাদ্য হিসেবে সুপরিচিত।

মাশরুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন: www.namdec.gov.bd

   

Wednesday, May 14, 2014

ওয়েস্টার মাশরুমের যত গুন


ওয়েস্টার মাশরুমের যত গুনঃ 
১। ওয়েস্টার মাশরুমে আরগোথিওনিন নামক অ্যামাইনো আসিড আছে যা গুরুত্বপূর্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং রান্নার পরও অক্ষুণ্ণ থাকে। 
২। ওয়েস্টার মাশরুমে বেঞ্জালডিহাইড নামক উপাদান থাকায় এই মাশরুম এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। 

৩। এই মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে মান সম্মত প্রোটিন আছে (শুকনা ওজনের প্রায় ৩০%)
৪। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যথাঃ জিংক, আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান।
৫। এই মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, নায়াসিন, ফলিক এসিড, ভিটামিন-বি২ ও ভিটামিন-বি৩ বর্তমান। 
৬। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকায় ইহা স্বাস্থের জন্য উপকারী।
৭। এতে ক্ষতিকারক চর্বি ও কার্ভাইড্রেট খুব কম পরিমাণে বিদ্যমান। 
৮। এই মাশরুম উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ও মেদ ভুরি কমায়। 
৯। এতে স্টাটিন নামক উপাদান থাকায় রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবারের সাথে এই মাশরুম যোগ করলে এর ক্ষতির হাত থেকে বাচা যায়। 
১০। ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এই মাশরুম। 
১১। হেপাটাইটিস-সি এর বিরুদ্ধে এই মাশরুম কাজ করে। 
১২। রক্ত স্বল্পতা, হাইপার এসিডিটি ও কোষ্ট কাঠিন্য দূরীকরণে সক্ষম এই মাশরুম।



Monday, May 12, 2014

ওজন কমাতে মাশরুম

ওজন কমাতে মাশরুম
মাশরুম একটি ভেজষ গুণ সম্পন্ন সামান্য ক্যালোরিযুক্ত খাবার এই খাবারটি কিন্তু অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে লন্ডন ইউনিভার্সিটি অফ বাফ্যালো পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পোর্টোবোলো প্রজাতির মাশরুম খাদকের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমায়
স্কুল অফ পালবিক হেলথের পুষ্টিবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক প্রধান গবেষক পিটার হ্যারোভ্যাথ জানিয়েছেন, চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মাশরুম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। চিনি বা শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই যারা ওজন কমাতে চান তারা লাভবান হতে পারবেন
পিটার জানিয়েছেন, আমাদের শরীরে প্রত্যেকটি কোষে শর্করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত শর্করা শরীরের কোষগুলো গ্রহণ করতে পারেনা। ফলে অতিরিক্ত শর্করা শরীরে মেদ হিসেবে জমা হয়। আর মাশরুম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখে
গবেষণার অংশ হিসেবে মিষ্টি পানীয়ের প্রতিক্রিয়ায় শর্করার মাত্রা কেমন থাকে তা দেখার জন্য ১৯ থেকে ২৯ বছর বয়সী জন পুরুষ ১০ জন নারীকে দুই সপ্তাহ ধরে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট পরীক্ষা করা হয়। এদের প্রত্যেককে সমান মিষ্টি তিন ধরনের পানীয় খাওয়ানো হয়। এই পানীয়ের মধ্যে ছিল ৭৫ গ্লুকোজ ড্রিঙ্ক, ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ ড্রিঙ্কের সঙ্গে . গ্রাম পোর্টোবেলো পাউডার, . গ্রাম পোর্টোবেলো পাউডারের সঙ্গে সুগন্ধী পানি
পরীক্ষার ফল হিসেবে দেখা যায়, গ্লুকোজ ড্রিঙ্কের সঙ্গে পোর্টোবেলো পাউডার খাওয়ার ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেছে
এই গবেষণার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট যে মাশরুম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্রাহকের ওজনে ভারসাম্য রাখে। তবে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ফল পান নারীরা



Saturday, May 10, 2014

বান্দরবান ও রোয়াংছড়িতে মাশরুম চাষ বাড়ছে

বান্দরবান ও রোয়াংছড়িতে মাশরুম চাষ বাড়ছে



মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বান্দরবান শহরের বালাঘাটার ছেনোয়ারা বেগম আর রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাইনিং মারমাসহ অনেকে।


সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার সহযোগিতা ছাড়াই বান্দরবান শহরের বালাঘাটায় ২০০৯ সাল থেকে লাভজনক মাশরুম চাষ করে আসছেন ছেনোয়ারা। দুই সন্তানের জননী ছেনোয়ারা বেগম স্বামী ছাড়াই কেবল তার ঘরের একটি অংশে আবাদ করা মাশরুম চাষ থেকে উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে আয় করছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি মাশরুম চাষের জন্যে বালাঘাটা উদ্যান উন্নয়ন বাগান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২০০৯ সাল থেকে নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করেন মাশরুম চাষ। তিনি প্রতিদিন গড়ে তিন কেজি মাশরুম উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন। প্রতি কেজি মাশরুম ২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। পরিচর্যা ও যথাযথ উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে মাশরুমের প্রতিটি স্পঞ্জ বা পোটলা থেকে তিন মাস পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। শুকনা খড় ও ফুল গামারি গাছের ভুসি বা গুঁড়া দিয়েই তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে থাকেন মাশরুমের স্পঞ্জ।
তবে তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে নিজের উদ্যোগে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে আরো এগুতে পারবেন এবং সেইসঙ্গে আগ্রহী চাষীদেরও তিনি প্রশিক্ষণ প্রদান করে বান্দরবান অঞ্চলে মাশরুম চাষ দ্রুত সম্প্রসারণে সক্ষম হবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার একমাত্র মাশরুম চাষি মারমা আদিবাসী নেতা চাইনিং মারমা। তিনি প্রতিদিন ১০ কেজি হারে মাশরুম
উৎপাদন ও বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন নতুনভাবে। অবশ্য বর্তমানে তার মাশরুমের ক্ষেত থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই কেজি পরিমাণ মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে এবং তা প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন।
পাহাড়ের মানুষ পাহাড়ি জীবনে অভ্যস্ত, তারা জঙ্গলের নানা প্রজাতির কৃষিপণ্য সবজি হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাশরুম ক্ষেতেও হাল অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাঙালিরাও মাশরুম খেতে খুবই আনন্দ পায়। মাশরুমের চাহিদাও সর্বত্রই বলে জানিয়েছেন মাশরুম চাষি চাইনিং চেয়ারম্যান।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের কচ্ছপতলী গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চাইনিং মারমা। তার মেজো ছেলে ক্যম্যাথোয়াই মারমা বাবার এ মাশরুম চাষে সার্বক্ষণিক সময় দেন। জানা গেছে, পুরো রোয়াংছড়ি উপজেলায় একমাত্র চাইনিং চেয়ারম্যানই মাশরুম চাষে এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় পর্যায় ছাড়াও সাভার থেকে তিনি মাশরুম চাষের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তবে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার কোনো ধরনের উপকরণ ও অর্থসহায়তা ছাড়াই তিনি মাশরুম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
সফল মাশরুম চাষী চাইনিং মারমা জানান, অর্থকরী ও পুষ্টিকর মাশরুমের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। সঠিক সময়ে পরিচর্যা ও যথাযথ উপকরণ ব্যবহারের মধ্যে মাশরুমের প্রতিটি স্পঞ্জ বা পোটলা থেকে তিন মাস পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। শুকনো খড় ও ফুল গামারি গাছের ভুসি বা গুঁড়া দিয়েই তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে থাকেন মাশরুমের স্পঞ্জ। বাড়ির নিচতলায় ও আঙিনায় হালকা আলো ও হালকা বাতাস লাগে এমন জায়গায় মাশরুমের স্পঞ্জগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল-বিকেল হালকা পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয় মাশরুমের স্পঞ্জগুলোতে। সব সম্প্রদায়ের জন্য হালাল ও অতি পুষ্টিকরসহ ২২টি রোগবালাই প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে এ মাশরুম।
মাশরুম চাষি চাইনিং মারমা আরো জানান, কৃষি বিভাগ ও উদ্যান উন্নয়ন অফিস থেকে কেবল মাশরুম চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েই আগ্রহীদের মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষিত চাষিদের পরে সরকারি বা বিভাগীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করা হলে বহু চাষিই এগিয়ে আসবেন লাভজনক এ মাশরুম চাষের দিকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, এখানকার পাহাড়ি মাটি মাশরুম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহু কৃষকই অন্য ফসলের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষে এগিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগও মাঠপর্যায়ে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে বিশেষ পরামর্শ দিচ্ছে চাষিদের।


মাশরুম চাষিদের সুখবর-মাগুরা থেকে দুই কোটি টাকার মাশরুম যাবে ইউএইতে

মাশরুম চাষিদের সুখবর-মাগুরা থেকে দুই কোটি টাকার মাশরুম যাবে ইউএইতে

মাগুরা জেলার মাশরুম চাষিদের উৎপাদিত দুই কোটি টাকার মাশরুম রপ্তানি হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। আগামী ২ জুন থেকে জেলা মাশরুম ফাউন্ডেশন ও কাজী মাশরুম ফার্মের উদ্যোগে এ রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে। জেলার শতাধিক মাশরুম চাষির কাছ থেকে এ মাশরুম সংগৃহীত হবে। প্রতি মাসে রপ্তানিযোগ্য মাশরুমের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দেড় টন। ইতিমধ্যে রপ্তানির যাবতীয় প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা হয়েছে। মাগুরার সাজিয়াড়া কাজী মাশরুম ফার্ম চত্বরে গতকাল মঙ্গলবার সফল মাশরুম চাষিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মশালায় এ তথ্য দেওয়া হয়। মাগুরা জেলা মাশরুম ফাউন্ডেশন ও কাজী মাশরুম ফার্ম এ কর্মশালার আয়োজন করে।
মাগুরা জেলা মাশরুম ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর হর্টিকালচারের উদ্যান তত্ত্ববিদ মহম্মদ আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ড্রিম মাশরুম পরিচালক বাবুল আক্তার, মাশরুম চাষি কামরুল হাসান মুকুল, ইমদাদুল হক ও তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। কর্মশালা শেষে অতিথিরা সাজিয়াড়া এলাকার ড্রিম মাশরুম ফার্ম পরিদর্শন করেন।

মাশরুম সমস্যা: ভালো নেই মাশরুম

ভালো নেই মাশরুম

-মোহাম্মদ মাহবুব আলম

মাশরুমকে খুব ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু মাশরুম সংশ্লিষ্ট অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত এবং প্রতিবন্ধী বেনিয়া ডক্টরদের টালবাহানায় আর নিদারুণ অবহেলায় মাশরুম যখন সাভারের রানা-প্লাজার মতো মুখ থুবড়ে পড়ল তখনই আমি এসব সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্ষোভের কথা লিখেছিলাম। সেগুলো ছাপা হওয়ার পর ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় মাশরুম প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শোনা যাচ্ছে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় আর মাশরুমের কার্যক্রম রাখতে উত্সাহী নন। মাত্র দুসপ্তাহের জন্য দেশে এসেছি। মাশরুম সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় নাকি আর কারো কথা রাখছেন না। রাখবেন কী করে! উনি তো অনেককেই চিনে ফেলেছেন। সরকারের বিভিন্ন স্তরে একাত্তরের কম্বল চোরদের বংশধরদের দাপট। কিন্তু তিনি নিকটঅতীতে একা সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক ভালো কিছু করেছেন। মাশরুমের এই রুগ্ন দশায় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ তিনি যেন এটিকে পুনরায় চাঙ্গা করার ব্যবস্থা করেন। যারা এর ক্ষতি করেছেন তাদের কাছ থেকে এটিকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। যে মাশরুমকে হরণ করেছে তাকে যেমন দূরে রাখতে হবে, তেমনি যে হরণ করতে দেখেছে তাকেও দূরে রাখতে হবেকেননা তিনি পরে সুযোগ পেলে করবেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের দোহাই দিয়ে আর কোনো কীর্তিমান অফিসার মাঠ পর্যায়ের এই জাতীয় কর্মকাণ্ডটি যেন কলুষিত না করতে পারে সেটি বিবেচনায় রেখে এখানে সত্, অরাজনৈতিক অফিসার কাম্য। আমি মাশরুমকে থামিয়ে দেয়ার জন্য লিখিনি। আমাদের মাশরুম এখনও অবুঝ শিশু। অবুঝ মাশরুম-শিশু নিয়ে আমাদের মাশরুম চাষিরা বিপাকে পড়েছে। মাশরুম চাষিদের সিংহভাগই মহিলা। এইসব মহিলার মাশরুম চাষ থেমে গেছে প্রকল্প পরিচালকের ফালতু ধারণানির্ভর অলীক গবেষণার কারণে। অশ্রুবিজড়িত আমার লেখাগুলোতে আমাদের গরিব মাশরুম চাষিদের কান্নার জল আর্তনাদ মিশে আছে। এই কান্না মন্ত্রণালয়কে বিব্রত করার জন্য নয়। মাশরুমকে রক্ষা করার জন্য। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র তার এক উপন্যাসের চরিত্রে বউ পেটানো এক পুরুষের জবানিতে লিখেছিলেন, ‘মারতে গেলে যে অমন করে বাধা দিস, এই জন্য না জানি আবার কবে মার খাস।মন্ত্রী-মহোদয় আমরা মাশরুম চাষিরা মাশরুমের ওপর এই আঘাত সইতে পারব না বলে এই আঘাতে বাধা দিচ্ছি। এখানকার উন্মাদ মাশরুম ডক্টরগণ নির্বিচারে ফাঞ্জিসাইড, পেস্টিসাইড ব্যবহার এবং মূল ল্যাবে কেমিক্যাল ফিউমিগেশন করে কোমল মাশরুমকে এমনিতেই নিতান্ত নাজুক করে ফেলেছে, বারো মাস চাষযোগ্য সাদা ওয়েস্টার মাশরুম তার উত্পাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এরা ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েও অনেক সময় নষ্ট করেছে। এহেন অবস্থায় রুগ্ন মাশরুম শিশুকে হত্যা না করে নিবিড় পরিচর্যার সুযোগ করে দিন। সবার আগে প্রয়োজন একে রাক্ষসের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করা।
লেখক : মালয়েশিয়া প্রবাসী মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা
kagrofarm@gmail.com



Friday, May 9, 2014

মাশরুম চাষের নানা সমস্যা

মাশরুম চাষের নানা সমস্যা
-মোহাম্মদ মাহবুব আলম

মাশরুমের দুরবস্থা নিয়ে একটি অশ্রুবিজড়িত লেখা লিখে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি। লেখাটি কয়েকটি দৈনিকে ছাপা হয়েছিল। লেখার সঙ্গে আমার -মেইল অ্যাড্রেস থাকাতে আমি অনেক মেইল পেয়েছি। অনেকেই বলেছেন_ সমস্যার কথা বলেছেন ভালো কথা, কিন্তু সমাধানের পথ কী? এদিকে মালয়েশিয়ায় আমার বর্তমান আবাসস্থল চেরাফে অবস্থানকারী আমার স্বজনরা বিশ্বাসই করতে পারছে না আমি মাশরুম ব্যবসা বাদ দিয়ে মালয়েশিয়া চলে এসেছি। গতকাল আমার বন্ধু আমাকে এখানকার একটি চেইন শপে নিয়ে গিয়েছিল। টেসকো চেইনশপ। বলা যায় আমাদের চারটি বসুন্ধরা সিটিকে অনায়েসে এখানে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। টেসকো চেইন শপে আমি বিভিন্ন রকম মাশরুম দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আমি মালয়েশিয়া এসেও মাশরুম ভুলতে পারছি না।

আমি একজন সাধারণ মাশরুম চাষি। আমি কি পরামর্শ দেব সরকারকে? এছাড়া আমি কৃষি বিভাগের কাউকে চিনি না। বিভাগের কোথায় কোন প-িত কি দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে সেটি জানা থাকলে ভালো হতো। কিন্তু একজনকে চিনি, যিনি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করছেন। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে তাকে ভালোভাবে ঠাহর করতে পারছি না, তবে এ বিশ্বাস আছে তিনি পাহাড়ের চূড়ায় বসে আমাদের শস্যে ভরা সবুজ-শ্যামল দেশটি দেখছেন। হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক তিনি আমাদের অগি্নকন্যা মতিয়া চৌধুরী। নাম বিশেষণে কন্যা শব্দটি থাকলেও তিনি আমার কাছে মায়ের মতো। শুনেছিলাম প্রকল্পকালে তাকে সাভারে আনা হবে। ভেবেছিলাম এই সুবাদে আমার নিরন্তর পরিশ্রমের মাশরুম ফার্মে হয়তো এই মহান মানুষটির পদার্পণ হবে। কিন্তু হয়নি। কারণ দায়িত্বপ্রাপ্তি লোকদের কারও মাথায় মাশরুম ছিল না, ছিল অন্যকিছু। লেখাটি যখন তৈরি করেছি তখন তার কথাই বারবার আমার মনস্পটে ভেসে উঠছে। তিনি শুধু আমাদের কৃষিমন্ত্রী নন, তিনি আওয়ামী ঘরানার নির্ভেজাল সাদামাটা মাটির মানুষ, আওয়ামী লীগের একজন কা-ারি। তিনি মন্ত্রী না থাকলে আমি একজন সাধারণ মাশরুম চাষি লেখাটি লিখতাম না। আমার আগের লেখাটি ছাপা হওয়ার পর আমাদের মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তারা কি করেছে সেটিই আমাকে আজকে আবার লিখতে বাধ্য করল বটে। আমার আগের লেখাটি যেদিন ছাপা হয় সেদিন বিকেল ৫টায় তিনজন অস্ত্রধারী মাস্তান মাশরুম অফিসে এসে প্রকল্প পরিচালককে খোঁজে এবং প্রকল্প পরিচালককে না পেয়ে অফিস পিয়নকে তার পিস্তলটি দেখিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্প পরিচালক ঠিকমতো অফিস করে যাচ্ছে, আর কোন মাস্তান আসেনি। আমি মাশরুম কেন্দ্রের সব মানুষকে হাড়ে-হাড়ে চিনি, আমার কাছে বিষয়টি জলের মতোই পরিষ্কার। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বুদ্ধিমান(?) অফিসারটি প্রকল্প পরিচালক অফিসে না থাকা অবস্থায় মাস্তানদের শোডাউন করিয়ে প্রকল্প পরিচালককে ভয়ভীতি দেখানোর আয়োজন করেছে এবং সম্ভবত তাকে খেপিয়ে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভীতু কাপুরুষ আবার অবেলায় বুদ্ধিমান প্রকল্প পরিচালক সেটি করার মতো দুঃসাহস দেখায়নি। সাবেক প্রকল্প পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত সালেহ আহমেদ সাহেব সাভারেই থাকেন, তার নিনিয়ানগিরিও উল্লেখ করার মতো। জাতীয় একটা প্রতিষ্ঠানের এখন তিনজন অফিসার, তারা সবাই অকর্মন্য এটি বললে এটি সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে। তাই বিশ্বাস করার জন্য একটু ভিন্নভাবে বলি : মাশরুম একটি বিশাল স্রোতস্বিনী নদী আর এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা কেউ সাঁতার জানে না। যে প্রতিষ্ঠানে প্রচুর গবেষণার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস করার সময় থিসিসের জন্য কোন এক্সপেরিমেন্ট করেনি এবং একইভাবে কোন এক্সপেরিমেন্ট ছাড়া বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাতারাতি পিএইচডি ক্রয় করে সেখানে ভালো কিছু আর হতে পারে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পাঠ শেষ করা কেউ যখন কোন প্রকল্পে কাজ করতে পারে না তখন বুঝতে হবে সেখানে ভালো কিছু হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পাস করা কোন সুন্দরী মেয়ে যখন চোখের জল ফেলে কোন প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কের কালিমা দিয়ে যায় তখন সেখানে আর ভালো কিছু হতে পারে না। অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ছাড়া আর পবিত্রতা না থাকলে সেখানে আর যাই হোক মাশরুম হবে না। মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে কেন মাশরুম এগোতে পারেনি, কেন মাশরুম ভালো কিছু ইনোভেট করতে পারেনি? কারণ এদের মাথায় মাশরুম নেই। এদের মাথাটা ফাঁকা নয়, সেখানে বিভিন্ন অশিক্ষা আর নষ্টামি দিয়ে ভরা। অনেক মানুষকে এরা পথে বসিয়েছে, আমার মতো কেউ প্রতিবাদ করেনি। একটু ভিন্ন পটভূমিতে নির্মিত হঠা বৃষ্টি সিনেমা দেখতে গিয়ে হঠা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু সিনেমাটি পুরস্কৃত হয়েছিল। কিন্তু এই হঠা পিএইচডি কোন কাজে লাগবে সেটি বুঝতে পারছি না। এরকম ডিগ্রি অর্জন করার মানে নিজেকে নিজে ঠকানো, আর যে নিজেকে ঠকায় সে অন্যকে কি করবে? এই লোকটি প্রকল্প চলাকালে বিভিন্ন ইতরামিতে নিমজ্জিত থাকত, বিভিন্ন সময় সে বিভিন্ন ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে শুধু প্রকল্পের সাধারণ মজুরদের ঠকানোর জন্য। সে নাটকের তিনি একাই নাট্যকার এবং একাই অভিনেতা। শুধু এই একটি মাত্র লোকের জন্য এখানকার বাকি লোকগুলো কলুষিত হয়েছে। সাবেক প্রকল্প পরিচালক সালেহ আহমেদ একজন ভালো মানুষ ছিলেন, তিনি এই লোকটির নোংরামির জন্য ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি, পরে তার আর মাথা ঠিক ছিল না। একজন চাষি হিসেবে আমার একটি পরামর্শ মাশরুমের জন্য উদারমনা মেধাবী লোক দরকার যার খামারবাড়ীতে এবং সচিবালয়ে কোন আত্মীয় নেই। দায়িত্ব এবং জবাবদিহিতা না থাকলে এই কম্ম সফল হবে না। ৫০ কোটি টাকা শেষ করে সাবেক প্রকল্প পরিচালক সালেহ আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ সভায় বলেছেন_ এই দেশ মাশরুম চাষের জন্য উপযুক্ত নয়, আর একজন প্রকল্প শেষ করে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত মাশরুম কর্মসূচির (জাবরকাটা প্রকল্প) পরিচালক হয়ে এবং বাটন মাশরুমের বিশাল আয়োজনে ব্যর্থ হয়ে বলছেন এই দেশে বাটন মাশরুম হবে না। এসব দায়িত্বহীন লোকদের আমরা আর এসব কাজের জায়গায় দেখতে চাই না। দায়িত্বজ্ঞানহীন এসব অসফল কৃষিবিদদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একটি গল্প মনে পড়ছে। বলছি শুনুন, আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণীর ঘটনা। অঙ্ক ক্লাস, বিএসসি স্যার খুব কড়া। সবাইকে সরল অঙ্কটা বুঝিয়েই ছাড়বেন। তিনি বললেন সমস্যা হলে আমি দশবার বুঝিয়ে দেব, কিন্তু পারতে হবে। পাশেই বসা হাদারাম এক বন্ধু বিপদ আসন্ন দেখে স্যারকে বলল, স্যার দ্বিতীয় লাইনের প্রথম বন্ধনীর কাজটা একটু বুঝিয়ে দেবেন কি? স্যার ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন_ এবার বুঝেছ? এবার হাদারাম বলল, স্যার চতুর্থ লাইনের গুণ ও ভাগের কাজটি আবার একটু যদি বুঝিয়ে দিতেন। স্যার বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু এতেও হাদারাম ক্ষান্ত হলো না। সে আরও কয়েকবার সরল অঙ্কের বিভিন্ন জায়গায় ভালো করে বুঝে নিলেন। অবশেষে হাদারাম নিশ্চুপ। স্যারের দ্বিধা কাটে না। ক্লান্ত স্যার জিজ্ঞেস করলেন_ এই যে এত করে অঙ্কটা বুঝে নিলা, বলত কি বুঝলা? হাদারাম যথেষ্ট স্পষ্ট স্বরে শোধাল- বুঝলাম আমার দ্বারা এটি সম্ভব নয়। ছোট হাদারামের কথায় হেসেছিলাম আজ বড় হাদারামদের কথায় কান্না পায়।

[লেখক : মালয়েশিয়া প্রবাসী মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা]




বিশ্বের সবচাইতে বিপদজনক যে ৫টি খাবার

বিশ্বের সবচাইতে বিপদজনক যে ৫টি খাবার

পৃথিবীতে সুস্বাদু খাবারের অভাব নেই। বিশ্বে নামী দামী খাদ্য তালিকা জুড়ে বসে আছে মুখে জল আনা অনেক খাবারই। কিন্তু সুস্বাদুর সাথে সাথে বিপজ্জনক যদি হয়, তাহলে সে খাবার কতজন খাদ্য প্রেমীর মনে ধরবে? যে খাবারগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যহানিকারক বেশ কিছু উপাদান সে সব খাবারগুলো মুখে তুলতে পারবেন কতজন? হ্যাঁ, বিশ্বে এমন খাবারও রয়েছে। এইখাবারগুলো সুস্বাদু তো বটেই, কিন্তু সাথে বিপদজনকও। আসুন দেখে নেই সেই খাবারগুলোর তালিকা যেগুলো স্বাদের পাশাপাশি “বিপদের” খাতাতেও নাম লিখিয়েছে।


ঝিনুক (ওয়েস্টার)


ঝিনুক কী তা আমরা সবাই জানি। আমাদের দেশে খাওয়ার প্রচলন না থাকলেও পশ্চিমা দেশগুলোতে ঝিনুক অনেক সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু স্বাদের পাশাপাশি ঝিনুক খাদ্য হিসেবে বিপদজনকের তালিকায় প্রথম স্থানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে কাঁচা ঝিনুক খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এতে বিদ্যমান নরোভাইরাস ও ভাইব্রিও এই দুটি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে গ্যাসট্রনটেরিটিস ও কলেরায় আক্রান্ত করে। এছাড়াও চামড়ায় ক্ষত ও পচনশীলতার রোগ এবং মারাত্মক সেপটিসিমিয়্যার সৃষ্টি করে।


আকী, জামাইকা

আকী হচ্ছে জামাইকার জাতীয় ফল। এটা বুটের একটি প্রজাতি কিন্তু দেখতে নাশপাতির মত। আকী অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল হিসেবে পুরো বিশ্বে পরিচিত। কিন্তু এই অতি সুস্বাদু ফলটিও হতে পারে মৃত্যুর কারণ, যদি না একে সঠিক উপায়ে খাওয়া হয়। কাঁচা কিংবা আধপাকা আকী ফলে একটি কামড় আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আকী ফলের বিষাক্ত কালো বিচি বমি ও হৃদরোগের কারণ হয়ে দাড়ায়। ফলটি না পাকা পর্যন্ত পুরো ফলে এই বিষ ছড়িয়ে থাকে। পুরোপুরি পেকে টুকটুকে লাল বর্ণ ধারন করলে ফলের ভেতরের স্পঞ্জি মাংসল অংশ বিষাক্ত বিচি থেকে আপনাআপনি ছেড়ে আসে ও খাওয়ার উপযোগী হয়। জামাইকার জাতীয় খাবার “ভয়িলা” আকী ফল দিয়ে তৈরি। একটি পরিপূর্ণ পাকা ফলের মাংসল অংশ সিদ্ধ করে নোনতা মাছের সাথে পরিবেশন করা হয় এই আকী ফলটি।


সান্নাকজি, কোরিয়া

কোরিয়ান যে খাবারটি বিপদজনক খাদ্য হিসেবে নাম লিখিয়েছে সেটি বাচ্চা অক্টোপাস দিয়ে তৈরি। এবং সব থেকে ভয়াবহ ব্যাপার এই যে জীবিত অবস্থায় এই অক্টোপাসগুলো খাওয়া হয়। স্বাদের দিক থেকে অসাধারণ কিন্তু বিপদের দিক থেকেও এটি তৃতীয়। বিপদজনক এই খাবারটি খাওয়ার সময় সামান্য অসাবধানতায় মারা যেতে পারেন যে কেউ। জীবিত অক্টোপাসের বাচ্চা থেকে এদের শুঁড়(কর্ষিকা) কেটে নেয়া হয় এবং তিল ও তিলের তেলের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। খাবার সময় একটু অসাবধানতায় শুঁড়ের স্যাকসন কাপ গলার ভেতরে আটকে যেয়ে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যে কেউ মারা যেতে পারে। বলা হয় এটি মুখের ভেতর নিয়ে অন্তত ১০০ বার চিবিয়ে তারপর গিলে ফেলা ভালো। না হলে মৃত্যু ভয় থাকে!


টুনা মাছ

টুনা মাছ ব্যাপকভাবে সমাদৃত এর স্বাদের জন্য। টুনা মাছ আমাদের দেশের বাজারে দেখা যায় না এর উৎপত্তি নেই বলে। কিন্তু বাজারে ক্যানে টুনা মাছ পাওয়া যায়। অনেকে স্যান্ডউইচ কিংবা খাবারে ওয়েস্টার্ন স্বাদ আনতে টিনজাত টুনা মাছ ব্যবহার করেন। কিন্তু টুনা মাছের রয়েছে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি। প্রতি বছর শত শত মানুষ টুনা মাছ খাবার কারনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। টুনা মাছ বাজারজাত করার সময় অসাবধানতায় স্ক্রমবোটক্সিন নামক প্যাথোজেন দ্বারা আক্রান্ত হয় যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে ও অন্যান্য মরণব্যাধি তৈরি করে। রোগের লক্ষণ দেখা যায় কথা জড়ানো, মাথাব্যাথা ও ডায়রিয়া থেকে। পরবর্তীতে এটি দৃষ্টি শক্তি পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়। সুতরাং টুনা মাছ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। টিনজাত টুনা মাছ খাবেন না। রেস্টুরেন্টে খেলেও ভালো কোন নামীদামী রেস্টুরেন্টে খাবেন।


মাশরুম

মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার নামে বর্তমানে পরিচিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রত্যেকটি মাশরুম খাবার উপযোগী। মাশরুমের প্রায় ১৪,০০০ প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে বেশীরভাগই খাওয়ার অনুপযোগী কারণ এগুলো বিষাক্ত। কিছু কিছু মাশরুমের নামই এর ভয়াবহতার পরিচয় বহন করে। যাদের মধ্যে ডেথ ক্যাপ ও ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল অন্যতম। এছাড়াও মাশরুমের অনেক প্রজাতি আছে যারা সহজলভ্য কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি। যে মাশরুমগুলো খাওয়ার উপযোগী ও পুষ্টিকর সেগুলো বর্তমানে চাষ করা হচ্ছে। বাদ বাকি মাশরুম খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো।

ভাগ্যবদল: ঝালকাঠিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাশরুম চাষ

ভাগ্যবদল: ঝালকাঠিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাশরুম চাষ

-কাজী খলিলুর রহমান ঝালকাঠি 


  ঝালকাঠিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাশরুম চাষ। পরীামূলকভাবে ওয়েস্টার প্রজাতির মাশরুম চাষে ১০ কৃষাণী সফলতা অর্জন করেছেন। তিন মাস আগে কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিণ এবং ৫০টি করে মাশরুমের স্পন নিয়ে তারা এর চাষ শুরু করেন। ইতোমধ্যে প্রতি কেজি দেড় শ’ টাকা দরে প্রত্যেকে মাসে গড়ে তিন-চার কেজি করে এ সবজি বিক্রি করেছেন। অধিক পরিমাণে ভেষজ গুণসম্পন্ন এ সবজি বিক্রিতে চাষিদের সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১০ জন কৃষাণীকে মাশরুম চাষের ওপর প্রশিণ দিয়ে প্রত্যেককে ৫০টি করে মাশরুমের স্পন দেয়া হয়। এ সবজি ঘরের আনাচে কানাচে এবং পরিত্যক্ত জায়গায় চাষ করা যায় এবং এর চাষ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ, খরচও কম। ৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে এবং ৪ ফুট উচ্চতার একটি সেল্ফ তৈরি করে তার মধ্যে চারটি তাক বানিয়ে ৫০টি স্পন চাষ করা যায়। ফলে এতে অধিক পরিমাণে জায়গা কিংবা আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এ সবজি চাষের জন্য উপযোগী। তাই মাশরুমের প্যাকেটে শীতে দুইবার, বর্ষার দিনে দু-তিনবার এবং গরমে চার-পাঁচবার স্প্রে করে ভেজা ভেজা ভাব রাখতে হবে। প্যাকেটের বাইরে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আর্দ্রতা রাখা দরকার। তাহলেই ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদটি সবজি আকার ধারণ করে উৎপাদন হতে থাকবে। ১০-১৫ দিন পর পর মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। 
মাশরুম চাষি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের সাবেক সদস্য সাচিলাপুর গ্রামের মেরিনা বেগম, যোগেশ্বর গ্রামের পেয়ারা বেগম, চামটা গ্রামের মাহমুদা বেগম, কেওড়া ইউনিয়নের পিপলিতা গ্রামের মনোয়ারা বেগম, বিনয়কাঠি ইউনিয়নের মানপাশা গ্রামের কহিনুর বেগম জানান, কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তারা মাশরুম চাষ করছেন। তারা ঢাকার সাভারে মাশরুম সেন্টারে গিয়ে এ চাষ পদ্ধতির বিষয়ে এক দিনের প্রশিণ নিয়েছেন। প্রশিণ শেষে তাদের ১০ জনের প্রত্যেকে ৫০টি করে মোট ৫০০টি মাশরুমের স্পন (প্যাকেট) দেয়া হয় কৃষি বিভাগ থেকে। তারা এই স্পন নিয়ে ঘরের বারান্দায় তাকে সাজিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন। চাষের ১০ দিনের মধ্যেই মাশরুম হওয়া শুরু করে। ৫০টি স্পন থেকে মাসে গড়ে তিন-চার কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। 
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ খান জানান, মাশরুম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন পুষ্টিকর সবজি জাতীয় খাবার। মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির দরকার হয় না এবং স্বল্প সময়ে ৭-১০ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায়। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় রায় জানান, মাশরুমে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে উঁচু মাত্রায়। এতে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। ফলে দেহের ইম্যুন সিস্টেম উন্নত করে। এই প্রোটিনে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ৯টি এমাইনো এসিড প্রশংসনীয় মাত্রায় আছে।


মাশরুম চাষঃ এক মরীচিকার নাম…


মাশরুম চাষঃ এক মরীচিকার নাম…


বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সারাদেশে হঠাৎ করে শুরু হল মাশরুম চাষের মহা ধুম। দেশের নগর, শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠল অসংখ্য তথাকথিত “মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র”। ৫শ থেকে শুরু করে জনপ্রতি কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠে মাশরুমের স্পন উৎপাদনের ল্যাবরেটরি। এই সব ভুঁইফোঁড় ল্যাবরেটরির উৎপাদিত স্পন থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত (?) মাশরুম চাষীরা মাশরুম উৎপাদন করতে গিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারলেন না। প্রশিক্ষক এবং ল্যাব মালিকরা বললেন চাষীর অদক্ষতায় মাশরুম হয়না। চাষীরা বলেন বীজের মান খারাপ। অসংখ্য মানুষ এভাবে মাশরুম উৎপাদনের ব্যবসায় মার খেলেন। হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হলেন অন্ততঃ কয়েক লক্ষ মানুষ। কিন্তু প্রতারণার এখনো শেষ নেই। এমনকি মাশরুম উৎপাদনের অবস্থা এখনো বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় হলেও থেমে নেই সরকারী-বেসরকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমনি প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণায় লিপ্ত তেমনি সরকারী মাশরুম সেন্টারগুলোতে চলছে প্রশিক্ষণের নামে প্রকল্পের সরকারী অর্থের হরিলুট। বিগত প্রায় ১০ বছরের অধিক সময়ে সরকারের প্রায় ৬৪ কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশে বর্তমানে মাশরুমের উৎপাদন দৈনিক কত কেজিতে উন্নীত হয়েছে সেই হিসাব কেউ রাখছেনা। চলছে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের প্রচেষ্টা। কিন্তু কেন মাশরুমের উৎপাদন কাংখিত পরিমানে হচ্ছেনা সেই বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা যেন নেই কারো। নেই প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় বের করার কোন প্রচেষ্টা। চলছে শুধু লুট-পাটের যত আয়োজন।
বাংলাদেশে মাশরুম চাষের প্রধান সমস্যা হল, আমাদের আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী নয়। মাশরুমের স্পন (বীজ) উৎপাদনের জন্য যে মানের ল্যাব (মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ) প্রয়োজন সেই বিষয়ে অনেকের ধারনাই নেই। যারা জানেন তারা তেমন ল্যাব স্থাপন করার মত পুঁজি বিনিয়োগে কেউ আগ্রহী নয়। কারন ব্যয়বহুল এই ল্যাব স্হাপনে যে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে মাশরুমের বাজার সেই তুলনায় খুবই সীমিত। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়ার বৈচিত্র্য মাশরুম উৎপাদনে একটি বড় বাধা। সারা বছর প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা-আদ্রতা সংরক্ষণ, প্রয়োজন মত অক্সিজেন সরবরাহ এবং কার্বনডাই অক্সাইড ও আলো নিয়ন্ত্রণ করার মত উপযুক্ত কালচার হাউস (চাষ ঘর) তৈরী যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল একটি কর্মযজ্ঞ। সব বিষয় না জেনে একশ্রেনীর প্রতারক এবং সরকারের কিছু সংখ্যক দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তা দেশের বেকার মানুষকে অহেতুক এক মরীচিকার পিছনে ধাবিত করে চলেছে।
শীতকালে আমাদের দেশে বীজ উৎপদান এবং মাশরুম উৎপাদন অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। তাই এ সময়ে (দুই মাস) দেশে কিছু পরিমান মাশরুম উৎপাদন হয়। এক শ্রেণীর সাংবাদিক শীতের সময়ের এই মাশরুম উৎপাদনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকা-টেলিভিশনে। সরকারী কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় এবং নিজেদের বাহাদুরী জাহির করার জন্য তথাকথিত চাষীরাও বাড়িয়ে বলে অনেক কিছু। ফলে নতুন কিছু মানুষ আবার প্রতারণার শিকার হন। 


জাতীয় মাশরুম প্রকল্প কোন পথে

জাতীয় মাশরুম প্রকল্প কোন পথে?

-অরুণ সারথী


বাটন মাশরুম পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাশরুম। গত পাঁচ বছরে আমাদের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত মাশরুম উন্নয়ন ও জোরদারকরণ প্রকল্পে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ করেছে। প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকারের মাশরুমের চাষ পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে মাশরুমটির জন্য ব্যয় করা হয়েছে সেটি হচ্ছে বাটন মাশরুম। জাতীয় মাশরুম সেন্টারের ভেতরে সারা বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাশরুম চাষের জন্য দুটি বিশাল কক্ষ বিশিষ্ট আলাদা ভবন রয়েছে। পুরো প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত্ নিশ্চিত করতে গ্যাসচালিত বিশাল জেনারেটর থাকলেও শুধুমাত্র বাটন মাশরুম চাষে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের জন্য ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। মাশরুম কেন্দ্রের পূর্ব দিকে হর্টিকালচার সেন্টারে সহজ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির জন্য রয়েছে বিশাল টিনসেডের কম্পোস্ট ইয়ার্ড। কম্পোস্ট ইয়ার্ডের পশ্চিমদিকেই বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারে কম্পোস্ট তৈরির জন্য পাকা স্থাপনা। পূর্বদিকে তিনটি অত্যাধুনিক পাকা চাষ ঘর। 

আমেরিকায় হ্যারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর বাংলাদেশও সাহায্য করেছিল। তখন হ্যারী কে টমাসকে বলা হয়েছিল—সাহায্য হিসেবে আমরা কী দেবো—ওষুধ, খাবার নাকি কাপড়চোপড়? তখন হ্যারী বলেছিলেন—যদি আমি আপনাকে আমার কোটটি দেই তবে আপনি হয়তো খুশি হবেন, কিন্তু পরতে পারবেন না। তাই অর্থই হতে পারে একমাত্র ভালো দান। গল্পটি এজন্যই বললাম আমাদের এইসব বাটনের আয়োজন কিন্তু অন্য কোনো কাজে আসবে না। যাই হোক শুধু বাটন মাশরুমের জন্য বিভিন্ন দামি উপকরণ এবং ১২টি বিশেষ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে আমাদের জাতীয় মাশরুম কেন্দ্রে। এই যে বাটন মাশরুমের জন্য এত কিছু আছে এর মধ্যে যে জিনিসটি নেই সেটি হচ্ছে বাটন মাশরুম নিজেই। যদি বলেন তাবিজ করার জন্য, তাও নেই। আরো আছে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ যেগুলো কেবল বাটন মাশরুম থাকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, যেমন মাশরুম প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর এদের কর্মকাণ্ড রয়েছে; চলছে লোকদেখানো ট্রেনিং আর বিল ভাউচার তৈরির কাজ। গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেল কথাটিতেও কাঁঠাল কিন্তু গাছে আছে বলা হয়েছে, কিন্তু যেখানে বাণিজ্যিক মাশরুমই নেই সেখানে তার প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর এরা কী করে ! আর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বিশ্ব মোড়ল এফএও এখানে তিনজন কন্সালটেন্টকেই বা কীভাবে পোষে! বাটন মাশরুমের চাষের আগ্রহ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে নিরুত্সাহিত করেন। তিনি বলেন—বাটন মাশরুম আমাদের দেশে হবে না। নিজের ধারণাটিকে পোক্ত করতে তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ পিএইচডি এবং প্রকল্পের বিভিন্ন বস্তাবন্দি গবেষণা জ্ঞান প্রসব করে প্রকল্প পরিচালকের সাজানো গোছানো পুরো অফিস কক্ষটিকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু শুধু কথায় চিরা না ভেজাতে আমি একসময় বিরক্তিবোধ করি, তিনি এটি বুঝে ফেলেন এবং হস্তরেখাবিদের মতো আমার কপালের ভাঁজ পাঠ করে নিয়ে আবার বলতে থাকেন— 'এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান—কেউ ঠিকমতো কাজ করতে চায় না, এখানে কেউ আমার কথা শোনে না'। 

একজন মাশরুম বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে তিনি বললেন আমাদের দেশে বাটন মাশরুম হবে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে বাটন মাশরুম হয়েছে সাবেক প্রকল্প পরিচালকের সময়, যিনি মাশরুম বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিম বাঙলার সল্টলেকে বাটন মাশরুম হচ্ছে, বার্মা, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় হচ্ছে। ধরে নিলাম মাশরুম হবে না, তাহলে বাটন মাশরুমের জন্য কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগই বা কেন, কেনইবা হচ্ছে এর ওপর লোকদেখানো এত ট্রেনিং? মাশরুম প্রকল্পের একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল পড়তে গেলে দেখা যায় সেখানেও বাটন মাশরুম চাষে এরা সবচেয়ে বেশি পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করেছে। বাটন মাশরুমের চাষ ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে এরা বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ছবি ব্যবহার করেছে যেগুলো এদেশের নয়, এগুলো বিদেশে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামে গিয়ে এরা সংগ্রহ করেছে। হায় রে বাংলা আমার !

সরকার কৃষিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিচ্ছে, প্রকল্পের নামে বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ভিক্ষে এনে দিচ্ছে ; আর তার প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত অফিসারগণ সেগুলো নিয়ে যেমন পারছে খেলছে ! আমাদের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি একটু যদি দেখতেন। আমরা দেখেছি তিনি চাইলেই হয়। কৃষির অনেক সমস্যা তাঁর একার উদ্যোগেই সমাধান হয়েছে যেমন বিগত সময়ে সার কীটনাশক সমস্যা। কৃষিজ পণ্যের মধ্যে মাশরুম সবচেয়ে দামি সবজি—এর জন্য একটু নজর দেবেন কি? 

ঢাকা

Date: 15/02/2014

Thursday, May 8, 2014

জাতীয় মাশরুম কেন্দ্র সমাচার

জাতীয় মাশরুম কেন্দ্র সমাচার


মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম প্রায় এক দশক আগে। চাষের পুরনো অভিজ্ঞতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় মাশরুম বীজ সংগ্রহ করতে মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠান সাভারে যাই। দুপুর ১২টার সময় মাশরুম সেন্টারে গিয়ে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সন্ধান পেলাম না। অভ্যর্থনা কেন্দে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর চলে আসব- এমন সময় একজনকে পেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: মাশরুমের সাম্প্রতিক জাত সম্পর্কে কার কাছ থেকে জানতে পারব?
লোকটি হাতের ইশারা করে বললেন-
: পশ্চিম দিকে যান, ওখানে ডক্টর সাইদ কাজ করছেন, তার কাছেই সব জানতে পারবেন।
মনটা আনন্দে ভরে উঠল। যাক, অবশেষে একজন পিএইচডি করা লোক পাচ্ছি। অনেক কিছুই তাহলে জানা যাবে। পশ্চিম দিকে মাশরুম চাষ ঘরের কাছে গিয়ে দেখি, একজন লোক ভেজা ধানের খড় রোদে শুকাচ্ছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: আচ্ছা, . সাইদ সাহেব কে?
তিনি বললেন-
: আমিই সাইদ।
একটু অবাক হলাম। একজন বিশেষজ্ঞ ডক্টর লুঙ্গি মালকোচা করে কৃষকের মতো কাজ করছেন! সন্দেহ দূর করতে আমি কোমলকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম-
: আপনি কোথায় পিএইচডি করেছেন?
এবার তিনি বিরক্ত হলেন এবং ক্ষেপে গিয়ে বললেন-
: এখানে অনেক বেকুব ঘুরে বেড়ায়, তারাই আমাকে নিয়ে এরকম মশকরা করে।
একজন লোক দূর থেকে আমার সাইদ সাহেবের কথোপকথন শুনে মৃদু হাসছিলেন। সাইদ সাহেব অন্য একটা কাজে দূরে যাওয়ার পর সুহাস্য বদনে লোকটি আমার নিকটবর্তী হলেন। আমি বললাম-
: এটি তো মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠান!
তখন লোকটি বললেন-
: ধরনের কথায় সাইদ ভাই কিছু মনে করেন না। আসলে গবেষণার সব কাজই সাইদ ভাই করেন। তাকে দিয়ে সবাই পিএইচডির কাজ করিয়েছে তো, তাই তাকে সম্মানিত করতে তাকে নিয়ে ধরনের মশকরা করা হয়।
এখানে কজন কর্মকর্তা আছেন- জানতে চাইলে লোকটি তিনজন অফিসারের নাম বললেন। তারা সবাই ডক্টর। মাশরুম চাষ সম্পর্কে আমার যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা মাটির প্রদীপের মতো ধপ করে নিভে গেল। ফেরার সময় অভ্যর্থনা কেন্দ থেকে কয়েকটি মাশরুম ফার্মের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করলাম। সারা বছরই মাশরুমের বীজ পাওয়া যায়, এমন একটি ফার্মে ফোন করতেই ভদ্রলোক বললেন-
আমার কাছে কোনো মাশরুমের বীজ নেই।
আক্ষেপের সুরে বললাম-
: ঢাকা থেকে এত কষ্ট করে এলাম, সামান্য মাশরুম বীজ নিয়ে যেতে পারব না, তা কী করে হয়!
এবার তিনি রূঢ় বাক্য প্রয়োগ করে বললেন-
: শুনুন ভাই, ওখানে অনেক ডক্টর পয়দা হয়েছে, আপনার যা বলার দরকার- তাদের বলুন।
মাশরুম ফার্মের মালিকের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে উনি খুব বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বুঝাতে চাইলেন, জাতীয় মাশরুম কেন্দ্রে যা হয়, তা নিছকই লোক দেখানো। সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের কথা বলে এরা বিশাল বিশাল প্রকল্প আনে আর টাকা-পয়সা যেভাবে মন চায়, খরচ করে। ঊর্ধ্বতন মহলকে তুষ্ট করে এরা প্রায় একযুগ ধরে সাভারেই অবস্থান করছেন। চাকরির পাশাপাশি সাভারে জায়গা-জমি বাড়ি-গাড়ি করেছে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। যা হোক, কিছু মাশরুম বীজ কেনার ইচ্ছা নিয়ে আবারও তথ্যকেন্দে গেলাম। আমার অনুনয়-বিনয়ে মুগ্ধ হয়ে রিসিপসনিস্ট এক ভদ্রলোককে ডাকলেন। তিনি আমার চাহিদা শুনে ১০টি প্যাকেট মাশরুম বীজ দিলেন। বিনিময়ে ৮০ টাকা পরিশোধ করলাম, কিন্তু কোনো রশিদ পেলাম না। আমি বললাম- : আমি আগেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে মাশরুম বীজ ক্রয় করেছি। কিন্তু বিনা রশিদে নয়।
ভদ্রলোক বললেন-
: কী করব ভাই, আমরা অফিসের সামান্য কর্মচারী। কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম।
এসব বিষয় দেখার কেউ কি আছে দেশে? ব্যাপারে খামার বাড়ির বড় কর্তারা কিছু বলবেন কী?

-অরুণ সারথি, রূপনগর আবাসিক এলাকা, মিরপুর, ঢাকা

Date: 14/01/2014