মাশরুম বৃত্তান্ত……
- সায়মা রুমি
আপু তুমি
যে ব্যাঙের ছাতা
বানাও, আমাকে দেখাবে?
পাঁচ বছরের রাফাতের কথা
শুনে মনে মনেই
হাসল সায়রা। ছোটকালে মাটিতে
গজানো ওপরে ছাদ
আর নিচে বাটওয়ালা ছাতার
মত রঙ-বেরঙের
অদ্ভুত বস্তুগুলোকে সেও
ব্যাঙের ছাতাই ভাবতো
ব্যাঙরাও বুঝি সর্দি
হওয়ার ভয়ে বৃষ্টির সময়
এই ছাতাগুলোর নিচেই
আশ্রয় নেয়। নিজের
ঘরের ছোট্ট একটা
জায়গায় প্রায় ছয়
মাস ধরে মাশরুম
চাষ করছে সায়রা
। তার এ
কাজকর্মে পরিবারের সদস্যরাও প্রথম
প্রথম খুব অবাক
হয়েছিল। ফুলের গাছ,
ফলের গাছ, বাহারি
পাতাবাহার এমনকি ক্যাকটাস হলেও
একটা কথা ছিল।
এসব রেখে মাশরুমই কেন?
কিইবা এমন এর
মাহাত্ম্য?
চলুন তবে
মাশরুম নামের এই
অদ্ভুত বস্তুটার মাহাত্ম্য সম্পর্কে একটু
জেনে আসি।
ছত্রাক জগত
বা কিংডমের উচ্চতর
শ্রেণীর সদস্য মাশরুম। এদের
ওপরের ছাতার মত
অংশ, যেটা আমরা
দেখতে পাই, তাকে
বিজ্ঞানীরা বলেন ফ্রুটিং বডি
আর মাটির নিচে
অবস্থান করে গাছের
শিকড় সদৃশ মাইসেলিয়াম।
মাশরুমকে মানুষ
চিনেছে আজ অনেক
দিন হলো। চাইনিজ
এবং মিশরীয়রাই মূলত
সর্বপ্রথম মাশরুমের গুণাগুণ সম্পর্কে অবহিত
হয়। প্রাচীন মিশরের
রাজকীয় পরিবারের সদস্যরা মাশরুমকে খাদ্যতালিকায় রাখত
রাজকীয় খাদ্য হিসেবে। তাদের
বিশ্বাস ছিল, এতে
আছে অমরত্ব লাভের
উপাদান । সবুজ
মাঠে বা গহীন
বনে গজিয়ে ওঠা
বৃত্তাকারে সাজানো মাশরুমগুলো স্বর্গ
থেকে নেমে আসা
পরীদের নৃত্যের পদচিহ্ন অনুসারেই তৈরি
হয়েছে- প্রাচীনকালের লোকদের
এই ধারণা অনুসারে এসব
মাশরুম চক্রের নাম
দেওয়া হয় fairy ring।
মাশরুমে রয়েছে
মানুষের দেহের জন্য
প্রয়োজনীয় উন্নতমানের আমিষ,
শর্করা, ভিটামিন, খনিজ
লবণ ও ফাইবার। দেহের
জন্য ক্ষতিকর চর্বি
ও অতিরিক্ত ক্যালরি এতে
অত্যন্ত কম পরিমাণে থাকে
। মাশরুমে উপস্থিত ফাইবার
দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ
কমিয়ে মেদভূড়ি ও
উচ্চরক্তচাপের
সম্ভাবনা অনেকাংশে রোধ
করে।
এসব ছাড়াও দেহের
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও
দেহকোষ কর্মক্ষম রাখার
অন্যতম উপাদান পটাশিয়ামও যথেষ্ট
পরিমাণে রয়েছে মাশরুমে।
বিভিন্ন ওষুধ
তৈরিতেও মাশরুম ব্যবহৃত হয়,
যেমন এর ছত্রাক,
ভাইরাস ও প্রোটোজোয়া বিরোধী
ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি
হচ্ছে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক। বিভিন্ন মাশরুমের ক্যান্সারবিরোধী জিনকে
কাজে লাগানো হচ্ছে
ক্যান্সার চিকিৎসা ও
ক্যান্সার রোগীদের আয়ু
বৃদ্ধির কাজে। ডায়াবেটিস রোগীদের hyperglycemia বা রক্তে
অতিরিক্ত গ্লুকোজের পরিমাণ
কমাতে পারে মাশরুম।
পরিবেশ দূষণ
রোধেও মাশরুমের ভূমিকা
অনন্য । বিভিন্ন প্রজাতির মাশরুম
তেল বা পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বনকে বিশ্লেষণ করে
পরিবেশবান্ধব উপাদান তৈরি
করতে পারে। এ
ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তেল
দ্বারা দূষিত পানিকে
খুব অল্প খরচেই
পরিশোধন করা সম্ভব। এমনকি
রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবেও ব্যবহার করা
যেতে পারে মাশরুমকে। খাদ্য
প্রক্রিয়াজাতকরণ
ও ডিটারজেন্ট তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়
মাশরুম।
এ তো
গেল মাশরুমের সাধারণ
গুণাবলি, এর কিছু
তাক-লাগানো বৈশিষ্ট্যও আছে।
পৃথিবীতে প্রায় ৭০
ধরণের মাশরুম আছে
যারা আক্ষরিক অর্থেই
রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো
ছড়াতে সক্ষম। ১৮৪০
সালে ব্রাজিলে পাওয়া
flor-de-coco এর
আলো এতটাই তীব্র
যে সেই আলোতে
অনায়াসে বইপত্র পড়া
যায়।
সব মাশরুমই যে
আমাদের জন্য উপকারী,
তা কিন্তু নয়।
বিষাক্ত মাশরুম খাদ্য
হিসেবে গ্রহণ করলে
তা মৃত্যুর কারণও
হতে পারে। প্রাচীন ঐতিহাসিকদের মতে,
রোম সাম্রাজ্যের চতুর্থ
সম্রাট ক্লদিয়াসকে তার
স্ত্রী আগ্রিপ্পিনা বিষাক্ত মাশরুম
খাইয়ে হত্যা করেছিল। বিষাক্ত মাশরুম
সনাক্তকরণের বিভিন্ন উপায়
আগে প্রচলিত ছিল।
রূপার চামচ দিয়ে
রান্না করার সময়
চামচটি কালো হয়েগেলে ধরে
নেওয়া হত মাশরুমটি বিষাক্ত। তবে
পূর্বের এই পদ্ধতিগুলোর কোনটিই
এখন আর প্রচলিত নেই।বিশেষজ্ঞ ব্যতীত
আমাদের মত সাধারণ
মানুষের পক্ষে বিষাক্ত মাশরুম
আর খাদ্যোপযোগী মাশরুমের মধ্যে
পার্থক্য করা মুশকিলই বটে।
ভোজনবিলাসী বলে
আমরা বাঙালিরা বেশ
পরিচিত- পেটের ক্ষিদে
মিটলেই আমরা সন্তুষ্ট। কী
খাচ্ছি- তার পুষ্টিগুণই বা
কতটুকু, তা দেহের
উলটো ক্ষতি করছে
কিনা- তা নিয়ে
আমরা মোটেও মাথা
ঘামাই না। তাই
হয়ত উনিশ শতকে
কবিগুরু তার কবিতায় আমাদের
কটাক্ষ করে বলেছিলেন- “মাথায়
ছোট বহরে বড়,
বাঙালি সন্তান” মাশরুমের অন্যান্য উপকারী
দিক বাদ দিয়ে
যদি শুধুমাত্র খাদ্যগুণের কথাই
ধরা হয়, তাও
কিন্তু ব্যাপক। শুধু
তাই নয়,পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা আর
আলোর ব্যবস্থা থাকলে
অল্প খরচে ঘরোয়া
পরিবেশেই, কাঠের গুঁড়া
আর খড়কুটোতেও এদের
উৎপাদন
করা সম্ভব। তাই
পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা
করে হলেও যদি
মাশরুমকে খাদ্য তালিকায় স্থান
দেওয়া যায় তাহলে
একদিকে যেমন দেহের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে বহরে
বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও
কমে যায় অনেকাংশেই।
Source: http://environmentmove.com
No comments:
Post a Comment