Pages

Friday, May 9, 2014

জাতীয় মাশরুম প্রকল্প কোন পথে

জাতীয় মাশরুম প্রকল্প কোন পথে?

-অরুণ সারথী


বাটন মাশরুম পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাশরুম। গত পাঁচ বছরে আমাদের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত মাশরুম উন্নয়ন ও জোরদারকরণ প্রকল্পে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ করেছে। প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকারের মাশরুমের চাষ পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে মাশরুমটির জন্য ব্যয় করা হয়েছে সেটি হচ্ছে বাটন মাশরুম। জাতীয় মাশরুম সেন্টারের ভেতরে সারা বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাশরুম চাষের জন্য দুটি বিশাল কক্ষ বিশিষ্ট আলাদা ভবন রয়েছে। পুরো প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত্ নিশ্চিত করতে গ্যাসচালিত বিশাল জেনারেটর থাকলেও শুধুমাত্র বাটন মাশরুম চাষে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের জন্য ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। মাশরুম কেন্দ্রের পূর্ব দিকে হর্টিকালচার সেন্টারে সহজ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির জন্য রয়েছে বিশাল টিনসেডের কম্পোস্ট ইয়ার্ড। কম্পোস্ট ইয়ার্ডের পশ্চিমদিকেই বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারে কম্পোস্ট তৈরির জন্য পাকা স্থাপনা। পূর্বদিকে তিনটি অত্যাধুনিক পাকা চাষ ঘর। 

আমেরিকায় হ্যারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর বাংলাদেশও সাহায্য করেছিল। তখন হ্যারী কে টমাসকে বলা হয়েছিল—সাহায্য হিসেবে আমরা কী দেবো—ওষুধ, খাবার নাকি কাপড়চোপড়? তখন হ্যারী বলেছিলেন—যদি আমি আপনাকে আমার কোটটি দেই তবে আপনি হয়তো খুশি হবেন, কিন্তু পরতে পারবেন না। তাই অর্থই হতে পারে একমাত্র ভালো দান। গল্পটি এজন্যই বললাম আমাদের এইসব বাটনের আয়োজন কিন্তু অন্য কোনো কাজে আসবে না। যাই হোক শুধু বাটন মাশরুমের জন্য বিভিন্ন দামি উপকরণ এবং ১২টি বিশেষ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে আমাদের জাতীয় মাশরুম কেন্দ্রে। এই যে বাটন মাশরুমের জন্য এত কিছু আছে এর মধ্যে যে জিনিসটি নেই সেটি হচ্ছে বাটন মাশরুম নিজেই। যদি বলেন তাবিজ করার জন্য, তাও নেই। আরো আছে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ যেগুলো কেবল বাটন মাশরুম থাকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, যেমন মাশরুম প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর এদের কর্মকাণ্ড রয়েছে; চলছে লোকদেখানো ট্রেনিং আর বিল ভাউচার তৈরির কাজ। গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেল কথাটিতেও কাঁঠাল কিন্তু গাছে আছে বলা হয়েছে, কিন্তু যেখানে বাণিজ্যিক মাশরুমই নেই সেখানে তার প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর এরা কী করে ! আর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বিশ্ব মোড়ল এফএও এখানে তিনজন কন্সালটেন্টকেই বা কীভাবে পোষে! বাটন মাশরুমের চাষের আগ্রহ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে নিরুত্সাহিত করেন। তিনি বলেন—বাটন মাশরুম আমাদের দেশে হবে না। নিজের ধারণাটিকে পোক্ত করতে তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ পিএইচডি এবং প্রকল্পের বিভিন্ন বস্তাবন্দি গবেষণা জ্ঞান প্রসব করে প্রকল্প পরিচালকের সাজানো গোছানো পুরো অফিস কক্ষটিকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু শুধু কথায় চিরা না ভেজাতে আমি একসময় বিরক্তিবোধ করি, তিনি এটি বুঝে ফেলেন এবং হস্তরেখাবিদের মতো আমার কপালের ভাঁজ পাঠ করে নিয়ে আবার বলতে থাকেন— 'এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান—কেউ ঠিকমতো কাজ করতে চায় না, এখানে কেউ আমার কথা শোনে না'। 

একজন মাশরুম বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে তিনি বললেন আমাদের দেশে বাটন মাশরুম হবে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে বাটন মাশরুম হয়েছে সাবেক প্রকল্প পরিচালকের সময়, যিনি মাশরুম বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিম বাঙলার সল্টলেকে বাটন মাশরুম হচ্ছে, বার্মা, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় হচ্ছে। ধরে নিলাম মাশরুম হবে না, তাহলে বাটন মাশরুমের জন্য কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগই বা কেন, কেনইবা হচ্ছে এর ওপর লোকদেখানো এত ট্রেনিং? মাশরুম প্রকল্পের একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল পড়তে গেলে দেখা যায় সেখানেও বাটন মাশরুম চাষে এরা সবচেয়ে বেশি পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করেছে। বাটন মাশরুমের চাষ ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে এরা বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ছবি ব্যবহার করেছে যেগুলো এদেশের নয়, এগুলো বিদেশে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামে গিয়ে এরা সংগ্রহ করেছে। হায় রে বাংলা আমার !

সরকার কৃষিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিচ্ছে, প্রকল্পের নামে বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ভিক্ষে এনে দিচ্ছে ; আর তার প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত অফিসারগণ সেগুলো নিয়ে যেমন পারছে খেলছে ! আমাদের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি একটু যদি দেখতেন। আমরা দেখেছি তিনি চাইলেই হয়। কৃষির অনেক সমস্যা তাঁর একার উদ্যোগেই সমাধান হয়েছে যেমন বিগত সময়ে সার কীটনাশক সমস্যা। কৃষিজ পণ্যের মধ্যে মাশরুম সবচেয়ে দামি সবজি—এর জন্য একটু নজর দেবেন কি? 

ঢাকা

Date: 15/02/2014

No comments:

Post a Comment