বিশ্বের সবচাইতে বিপদজনক যে ৫টি খাবার
পৃথিবীতে সুস্বাদু খাবারের অভাব নেই। বিশ্বে নামী দামী খাদ্য তালিকা জুড়ে বসে আছে মুখে জল আনা অনেক খাবারই। কিন্তু
সুস্বাদুর সাথে সাথে বিপজ্জনক যদি হয়, তাহলে সে খাবার কতজন খাদ্য প্রেমীর
মনে ধরবে? যে খাবারগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যহানিকারক বেশ কিছু উপাদান
সে সব খাবারগুলো মুখে তুলতে পারবেন কতজন? হ্যাঁ, বিশ্বে এমন খাবারও রয়েছে।
এইখাবারগুলো সুস্বাদু তো বটেই, কিন্তু সাথে বিপদজনকও। আসুন দেখে নেই সেই
খাবারগুলোর তালিকা যেগুলো স্বাদের পাশাপাশি “বিপদের” খাতাতেও নাম লিখিয়েছে।
ঝিনুক (ওয়েস্টার)
ঝিনুক কী তা আমরা সবাই জানি। আমাদের দেশে খাওয়ার প্রচলন না থাকলেও
পশ্চিমা দেশগুলোতে ঝিনুক অনেক সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু
স্বাদের পাশাপাশি ঝিনুক খাদ্য হিসেবে বিপদজনকের তালিকায় প্রথম স্থানে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে কাঁচা
ঝিনুক খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এতে বিদ্যমান
নরোভাইরাস ও ভাইব্রিও এই দুটি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে গ্যাসট্রনটেরিটিস ও
কলেরায় আক্রান্ত করে। এছাড়াও চামড়ায় ক্ষত ও পচনশীলতার রোগ এবং মারাত্মক
সেপটিসিমিয়্যার সৃষ্টি করে।
আকী, জামাইকা
আকী হচ্ছে জামাইকার জাতীয় ফল। এটা বুটের একটি প্রজাতি কিন্তু দেখতে
নাশপাতির মত। আকী অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল হিসেবে পুরো বিশ্বে পরিচিত।
কিন্তু এই অতি সুস্বাদু ফলটিও হতে পারে মৃত্যুর কারণ, যদি না একে সঠিক
উপায়ে খাওয়া হয়। কাঁচা কিংবা আধপাকা আকী ফলে একটি কামড় আপনার মৃত্যুর কারণ
হতে পারে। আকী ফলের বিষাক্ত কালো বিচি বমি ও হৃদরোগের কারণ হয়ে দাড়ায়। ফলটি
না পাকা পর্যন্ত পুরো ফলে এই বিষ ছড়িয়ে থাকে। পুরোপুরি পেকে টুকটুকে লাল
বর্ণ ধারন করলে ফলের ভেতরের স্পঞ্জি মাংসল অংশ বিষাক্ত বিচি থেকে আপনাআপনি
ছেড়ে আসে ও খাওয়ার উপযোগী হয়। জামাইকার জাতীয় খাবার “ভয়িলা” আকী ফল দিয়ে
তৈরি। একটি পরিপূর্ণ পাকা ফলের মাংসল অংশ সিদ্ধ করে নোনতা মাছের সাথে
পরিবেশন করা হয় এই আকী ফলটি।
সান্নাকজি, কোরিয়া
কোরিয়ান যে খাবারটি বিপদজনক খাদ্য হিসেবে নাম লিখিয়েছে সেটি বাচ্চা
অক্টোপাস দিয়ে তৈরি। এবং সব থেকে ভয়াবহ ব্যাপার এই যে জীবিত অবস্থায় এই
অক্টোপাসগুলো খাওয়া হয়। স্বাদের দিক থেকে অসাধারণ কিন্তু বিপদের দিক থেকেও
এটি তৃতীয়। বিপদজনক এই খাবারটি খাওয়ার সময় সামান্য অসাবধানতায় মারা যেতে
পারেন যে কেউ। জীবিত অক্টোপাসের বাচ্চা থেকে এদের শুঁড়(কর্ষিকা) কেটে নেয়া
হয় এবং তিল ও তিলের তেলের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। খাবার সময় একটু
অসাবধানতায় শুঁড়ের স্যাকসন কাপ গলার ভেতরে আটকে যেয়ে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ
হয়ে যে কেউ মারা যেতে পারে। বলা হয় এটি মুখের ভেতর নিয়ে অন্তত ১০০ বার
চিবিয়ে তারপর গিলে ফেলা ভালো। না হলে মৃত্যু ভয় থাকে!
টুনা মাছ
টুনা মাছ ব্যাপকভাবে সমাদৃত এর স্বাদের জন্য। টুনা মাছ আমাদের দেশের
বাজারে দেখা যায় না এর উৎপত্তি নেই বলে। কিন্তু বাজারে ক্যানে টুনা মাছ
পাওয়া যায়। অনেকে স্যান্ডউইচ কিংবা খাবারে ওয়েস্টার্ন স্বাদ আনতে টিনজাত
টুনা মাছ ব্যবহার করেন। কিন্তু টুনা মাছের রয়েছে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
প্রতি বছর শত শত মানুষ টুনা মাছ খাবার কারনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। টুনা মাছ
বাজারজাত করার সময় অসাবধানতায় স্ক্রমবোটক্সিন নামক প্যাথোজেন দ্বারা
আক্রান্ত হয় যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে ও
অন্যান্য মরণব্যাধি তৈরি করে। রোগের লক্ষণ দেখা যায় কথা জড়ানো, মাথাব্যাথা ও
ডায়রিয়া থেকে। পরবর্তীতে এটি দৃষ্টি শক্তি পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়। সুতরাং
টুনা মাছ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। টিনজাত টুনা মাছ খাবেন না।
রেস্টুরেন্টে খেলেও ভালো কোন নামীদামী রেস্টুরেন্টে খাবেন।
মাশরুম
মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার নামে বর্তমানে পরিচিত।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রত্যেকটি মাশরুম খাবার উপযোগী। মাশরুমের প্রায়
১৪,০০০ প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে বেশীরভাগই খাওয়ার অনুপযোগী কারণ এগুলো
বিষাক্ত। কিছু কিছু মাশরুমের নামই এর ভয়াবহতার পরিচয় বহন করে। যাদের মধ্যে
ডেথ ক্যাপ ও ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল অন্যতম। এছাড়াও মাশরুমের অনেক প্রজাতি
আছে যারা সহজলভ্য কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি। যে মাশরুমগুলো খাওয়ার
উপযোগী ও পুষ্টিকর সেগুলো বর্তমানে চাষ করা হচ্ছে। বাদ বাকি মাশরুম খাওয়া
এড়িয়ে চলাই ভালো।
Source: http://prothomsongbad.com
No comments:
Post a Comment