Pages

Thursday, June 19, 2014

মাশরুম চাষ ও বিপণন

মাশরুম চাষ ও বিপণন


মাশরুম চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু মাশরুম চাষ ও বিপণন সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় অনেকেই এ কাজে আশানুরূপ ফল পান না।বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েক ধরনের মাশরুম চাষ করা হয়।
নাম:

ঝিনুক মাশরুম, দুধ মাশরুম, কান মাশরুম, বোতাম মাশরুম, তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম, শীতক মাশরুম এবং খড় মাশরুম।



মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে মাশরুমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

গ্রীষ্মকালীন মাশরুমন্ধ দুধ মাশরুম, খড় মাশরুম। (২) শীতকালীন মাশরুম- শীতক ও বোতাম মাশরুম। (৩) বারোমাসী মাশরুমন্ধঝিনুক মাশরুম।
মাশরুম চাষের উপযোগী তাপমাত্রা :
নাম মাইসোলিয়াম বৃদ্ধির মাশরুমের ফুল
তাপমাত্রা ফোটার তাপমাত্রা
ঝিনুক মাশরুম ২০-২৫ক্কঈ ১৫-৩০ক্কঈ
দুধছাতু ” ২৫-৩৫ক্ক ২৭-৩৫ক্কঈ
খড় ” ২৫-৩০ক্ক ২৮-৩৫ক্কঈ
শীতক ” ২২-২৮ক্ক ১৫-২২ক্কঈ
বোতাম ” ২৪-৩০ক্ক ১৫-২৪ক্কঈ
ঔষধি ” ২২-২৮ক্ক ২৫-৩৫ক্কঈ
মাশরুমের চাষঘর :
মাশরুম চাষঘর তৈরির জন্য পাঁচটি বিষয়কে মূলনীতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অক্সিজেনের উপস্খিতি :
মাশরুম মূলত কাঠের গুঁড়ো থেকে খাবার পায়। এদের ফুল উৎপাদনের সময় বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়। তখন কাঠের গুঁড়ো অক্সিজেনের উপস্খিতিতে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য সহজলভ্য করে যা পাতা গজাতে সাহায্য করে। এ সময় প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাই অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আলো :
মাশরুম ঘরটি আবছা অìধকার যুক্ত হতে হবে। যেন একজন লোক খালি চোখে খবরের কাগজ পড়তে পারেন।
তাপমাত্রা :
মাশরুম ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ক্ক সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার ব্যবস্খা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছনের চালা বা টিনের ঘরে সিলিংয়ের ব্যবস্খা করা যেতে পারে। অন্যদিকে ঘরটি গাছের নিচে হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
আর্দ্রতা :
মাশরুম ঘরের আর্দ্রতা ৪০-৪৫ শতাংশের মধ্যে রাখা ভালো।
কার্বন-ডাই-অক্সাইডমুক্ত :
কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বের করতে হবে। অক্সিজেন কাঠের গুঁড়োকে জড়িত করে খাদ্য উৎপাদনের সময় প্রচুর কার্জন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে ফুল উৎপাদনে প্রতিবìধকতা সৃষ্টি করে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাস থেকে ভারী বিধায় ঘরে নিু অংশে বায়ু প্রবাহ ছাড়া বের হতে চায় না। তাই ঘরের নিচের অংশ বায়ু চলাচলের ব্যবস্খা থাকা আবশ্যক।

চাষ পদ্ধতি :
বীজ সংগ্রহের পর স্পন প্যাকেটের কোনাযুক্ত দুই পাশের ঘাড় বরাবর বেশি উপরে আবার (বেশি নিচে না) ইউ আকারে কেটে কিছু অংশ ছেঁটে ফেলে দেয়ার পর মাশরুমের মাইসোলিয়াম উত্তেজিত হয়। কাটা প্যাকেটকে পাঁচ মিনিট পানিতে চুবিয়ে পানি ঝরিয়ে অথবা কেটে সরাসরি চাষ ঘরের মেঝে অথবা তাকে সাজিয়ে রেখে চাষ করা যায়। অত:পর চাষ ঘরের প্যাকেটের চার পাশের আর্দ্রতা ৪০-৪৫ শতাংশ রাখার জন্য দিনে ২ থেকে ৩ বার (প্রয়োজনে কম বেশি) স্প্রে মেশিনে পানি ছিটাতে হবে, যেন প্যাকেট ও আশপাশ ভিজে যাবে কিন্তু পানি জমবে না। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মাশরুমের অঙ্কুর পিনের মাথার মতো বের হবে। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেমাশরুম তোলার উপযোগী হয়। মাশরুম তোলার এক দিন আগে গায়ে পানি স্প্রে না করলে সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বাজারজাতের সুবিধা হয়। মাশরুমের ফুলের শিরাগুলো ঢিলা হওয়ার আগেই মাশরুম সংগ্রহ করা উত্তম। সংগ্রহের সময় মাশরুম হাত দিয়ে তুলে এনে পরিষ্কার করে গ্রেডিং করতে হবে। তারপর পি পি ব্যাগে ভরে (০.২-০.২৫ মি.মি) প্যাকিং করে সিলিং করে বাজারজাত করতে হবে। প্রথমবার মাশরুম তোলার পর প্যাকেট এক দিন বিশ্রাম অবস্খায় রাখতে হবে এবং পরের দিন কাটা অংশে আবার চামচ দিয়ে চেঁছে ফেলে আগের মতো পানি স্প্রে করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর আবার মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। একইভাবে একটি প্যাকেট থেকে সাত থেকে আটবার মাশরুম সংগ্রহ করে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।

আন্ত:পরিচর্যা :
মাশরুম ঘরের চারপাশ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু মাশরুম একটি স্পর্শকাতর ছত্রাকজাতীয় সবজি। চাষঘরে সকাল-বিকেল পরিমাণমতো পানি স্প্রে করতে হবে। ঘরের মধ্যে পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরিধান করে ঢুকতে হবে। মাশরুমের সারি থেকে সারির মধ্যে ঘন প্যাকেটের একটিতে অন্যটির গায়ের সঙ্গে লাগানো যাবে না। মাশরুমের আকার সুন্দর করতে অতিরিক্ত অঙ্কুর ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে প্রুনিং করে দিতে হবে। মাশরুমের শিরাগুলো ঢিলা হওয়ার পর গায়ে পানি স্প্রে করা যাবে না। গরমের দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্প্রেমেশিন দিয়ে বৃষ্টির মতো ঘরের দেয়াল এবং মেঝে কয়েকবার ভিজিয়ে দিতে হবে। তখন সম্ভব হলে এ সময় ফ্যান ছেড়ে দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ফ্যান বেশি সময় ব্যবহার করলে স্পন অথবা মাশরুম বেশি শুকিয়ে যাবে। সুতরাং পরপরই পানি স্প্রে করতে হবে। মাশরুমের সাধারণত কোনো রোগবালাই নেই। কিংবা পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় না। তবে কখনো কখনো মাছি, তেলাপোকা বা ইঁদুর মাশরুমের ক্ষতি করতে পারে।
এ অবস্খা থেকে রেহাই পেতে চাষঘরের চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ভালো। এ ক্ষেত্রে মাশরুম ঘরের নিচ দিয়ে নেট ব্যবহার করে এবং ঘরের চারপাশে ব্লিচিং পাউডার, কীটনাশক এবং ইঁদুর নাশ ক ওষুধ ব্যবহার করে এ ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কখনো কখনো মাশরুমের অঙ্কুর সবুজ অথবা হলুদ হয়ে মারা যেতে পারে। এ অবস্খা দেখা মাত্রই প্যাকেটগুলো সরিয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্খা নিতে হবে।

মাশরুম সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন :
মাশরুম সংগ্রহ সাধারণত সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ওপর নির্ভরশীল। যদি বেশি দিন সংরক্ষণ করে অথবা অনেক সময় রেখে বাজারজাত করতে হয় তাহলে মাশরুম কিছুটা ছোট অবস্খায় সংগ্রহ করতে হবে। দিনে দিনেই যদি বাজারজাতের সুবিধা থাকে তাহলে মাশরুমগুলোর কিনারা ফেটে যাওয়ার আগে বা পেছনের শিরাগুলো ঢিলা হওয়ার আগে উত্তোলন করতে হবে। সঠিকভাবে প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণের জন্য মাশরুম উত্তোলনের আগের দিন থেকে পানি দেয়া বìধ করতে হবে। মাশরুমগুলো নিচের শক্ত অংশ ধারালো পরিষ্কার ছুরি দিয়ে কেটে পরিষ্কার টেবিলের ওপর আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখতে হবে। অত:পর মাশরুম বড়-ছোট গ্রেডিং করে পিপি ব্যাগের এক-তৃতীয়াংশ খালি রেখে প্যাকেট করে সিলিং করতে হবে। বাজারজাতের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্যাকেটগুলো অতিরিক্ত চাপাচাপি না হয় তাহলে মাশরুম দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।
মাশরুম সংরক্ষণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম এবং আট থেকে ১০ দিন পরপর ফসল তোলা যায়। পলিথিন মোড়কে ২০ থেকে ২১ক্ক সে: তাপমাত্রায় মাশরুম পাঁচ থেকে ছয় দিন ভালো রাখা যায়। পিপি ব্যাগে ভরে সিল করে ফিন্সজেও মাশরুম বেশ কয়েক দিন রাখা যায়।

মাশরুম উৎপাদনের আয়-ব্যয়:
পারিবারিক পর্যায়ে গ্রামে মাশরুম চাষ লাভজনক। গড় হিসেবে ঝিনুক বা দুধ মাশরুম চাষের জন্য ব্যবহৃত খড়ের ৫০ শতাংশ পরিমাণ কিংবা ততোধিক ফলন পাওয়া যায়।
নিুে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পর্যায়ে মাশরুমের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়া হলো :
(ক) পারিবারিক পর্যায়ে ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের আয়-ব্যয়:
১. কাঁচামাল পরিমাণ ব্যয় (টাকা) :
-ধানের খড় ২৫০০ কেজি ১৮৭৫.০০
-স্পন ৩৬৫ ” ৪৩৮০.০০
-পলিথিন ব্যাগ ৪০ ” ৩০০০.০০
-পিপি ব্যাগ ২৫ ” ১৭৫০.০০
-সুতার বল ৫ ” ১০০.০০
-ফরমাল ডিহাইড ৫ ” ২৫০.০০
-ব্যাভিস্টিন ০.২৫ গ্রাম ২৫০.০০
-ব্লিচিং পাউটার ৫ কেজি ১০০.০০
-বিবিধ ব্যয় (মোট খবচের ১০)% ১১৭০.০০
টাকা = ১২৮৭৫.০০

-শ্রমিক ব্যয় (৯০ দিন) ৬৩০০.০০
-চাষঘর নির্মাণ ৫০০০.০০
-স্প্রেয়ার, ড্রাম, ট্রে মোট ব্যয় ২৬১৭৫.০০
মোট আয় : উৎপাদন = ১২৫০ কেজি, বাতিল = ১২৫ কেজি ১০%) নিট উৎপাদন = ১১২৫ কেজিপ্রতি কেজি টা : ৬০/- হিসেবে আয় = ১১২৫কô৬০ = ৬৭,৫০০.০০
মোট লাভ = (আয় ৬৭,৫০০.০০ - ব্যয় ২৬,১৭৫.০০) = ৪১,৩২৫.০০


No comments:

Post a Comment