Pages

Sunday, June 1, 2014

মাশরুম তৈরি করে বায়ুপ্রবাহ!

মাশরুম তৈরি করে বায়ুপ্রবাহ!

শিরোনামটি পড়ে আপনার মনে কি ছবি ভেসে উঠছে? একটা বিশাল আকৃতির ব্যাঙের ছাতা আর তার চারপাশে বইছে ঝড়ো বাতাস! না, ব্যাপারটা এমন নয় মাশরুম বায়ুপ্রবাহ তৈরি করে ঠিকই, তবে তা বেশী শক্তিশালী নয় নিজের বংশবিস্তারে স্পোর বা রেণু দূরে দূরে ছড়িয়ে দেবার জন্যই তার এই বায়ুপ্রবাহ প্রয়োজন

আগে ধারণা করা হতো মাশরুম বংশবিস্তার করার জন্য একগুচ্ছ রেণু মাটিতে ফেলে দেয় এবং ভাগ্যক্রমে যদি একটা বাতাসের ঝাপটা আসে তবে তারা ছড়িয়ে যায়। কিন্তু ট্রিনিটি কলেজের এক গবেষণায় দেখা যায় তারা নিজেরাই একটি কৌশল অবলম্বন করে বাতাস তৈরি করে যা রেণুগুলোকে ছড়িয়ে যেতে সাহায্য করে।

কিভাবে এই কাজ করে থাকে মাশরুমের মতো একটি নিশ্চল জীব? তারা নিজেদের শরীর থেকে আর্দ্রতা বাষ্পীভূত করে দিয়ে বাতাস তৈরি করে। অন্যান্য উদ্ভিদ জাতীয় জীব প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজের শরীরে পানি ধরে রাখার জন্য। কিন্তু মাশরুম এই আর্দ্রতা বের হয় যেতে দেয় তার কারণ হলো এই বাতাস তৈরি।

আর্দ্রতা বাষ্পীভূত করার ফলে কি হয়? আমাদের শরীর থেকে ঘাম শুকিয়ে গেলে আমাদের যেমন একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে, তেমনি মাশরুমের শরীর থেকে এই পানি বাষ্পীভূত হবার সময়ে তাপ টেনে নিয়ে যায় এবং শরীর ঠাণ্ডা করে দেয়। ঠাণ্ডা বাতাস গরম বাতাসের চাইতে ভারী, এটা নিজের ভারেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আর তাছাড়া বাষ্পীভবনের ফলে যা বাষ্প তৈরি হয়, সেটা আবার হালকা এবং ওপরের দিকে উঠে যায়। এই দুইয়ের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় হালকা একটা বাতাসের স্রোত। এই স্রোতে ভেসে মাশরুমের রেণু কিছুটা ওপরেও উঠে যায়। মোটামুটি ইঞ্চি পর্যন্ত ওপরে উঠতে পারে এই রেণু।

মাশরুম বাস করে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে, গাছের গুঁড়ির ফাক-ফোঁকরে এবং বেশ চাপা জায়গায়। এসব জায়গায় প্রাকৃতিক বাতাস তেমন একটা প্রবেশ করে না। এক্ষেত্রে নিজের তৈরি বাতাস ব্যবহার করার ফলে মাশরুম রেণু বেশ কিছুটা জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ট্রিনিটি কলেজের গবেষক মার্কাস রোপার এবং এমিলি ড্রেসায়ার রেণু ছড়িয়ে পড়ার এই প্রক্রিয়া লেজার লাইট এবং একটি হাই-স্পিড ক্যামেরার মাধ্যমে তুলে এনেছেন। মাশরুমের শরীর থেকে পানি হারানো এবং তাপমাত্রার তথ্য ব্যবহার করে তারা দেখিয়ে দেন ঠিক কিভাবে এরা নিজেদের বাতাস তৈরি করছে। বেশ কিছু মাশরুম প্রাজাতির এভাবে রেণু ছড়ানোর প্রক্রিয়া দেখান তারা। শুধু এভাবে বাতাস তৈরির মাধ্যমেই নয়, আরও অনেক উপায় আছে যা ব্যবহার করে মাশরুম রেণু ছড়িয়ে দিতে পারে। কিছু মাশরুম আছে যারা দ্রুত বেগে বন্দুকের গুলির মতো ছুঁড়ে দেয় তাদের রেণু যার ফলে এটা বেশ কিছু দুরত্ব অতিক্রম করে ফেলে। আর রোপার বলেন, যদিও তাদের গবেষণার তথ্য দেখাতে লেজার লাইট ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু সাধারণ একটা টর্চলাইট নিয়ে রাতের বেলায় মাশরুম পর্যবেক্ষণ করলেও এই ব্যাপারটার দেখা মিলতে পারে।

রোপারের মতে, মাশরুম বা ফাঙ্গাস হলো জীববিজ্ঞানেরডার্ক ম্যাটারযার ব্যাপারে অনেক কিছুই এখনও অজানা। এখনও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না এদের কতগুলো প্রজাতি আছে। ধারণা করে নেওয়া হয় এদের ছয় লক্ষ থেকে ছয় মিলিয়ন প্রজাতি থাকতে পারে।



No comments:

Post a Comment