মাশরুম চাষ বেকারত্ব ঘোচাতে পারে
মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ভিটামিন 'ডি' এবং প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও লৌহ পাওয়া যায়। তাই মানুষ নানাভাবে মাশরুমকে খাদ্য হিসেবে আহরণ করতে শুরু করেছে। ফলে দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে। দেশের কোন কোন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর চাষ শুরু হয়েছে। তবে রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক আকারে এর চাষ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
রাঙ্গামাটির জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ উপকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় মাশরুম চাষের বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর পাশাপাশি সংস্থাটি ৯০০ জন বেকার নারী ও পুরুষকে মাশরুম চাষের বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে ১ হাজার জনকে। এ প্রশিক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গাপানি গ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সেখানে ৪টি মাশরুম পল্লী গড়ে উঠেছে। পল্লীগুলো হচ্ছে_ মনোঘর মাশরুম পল্লী সমিতি, রাঙ্গাপানি মাশরুম পল্লী সমিতি, টেকনিক্যাল পাড়া মাশরুম পল্লী সমিতি ও ভেদভেদি মাশরুম পল্লী সমিতি। প্রতিটি সমিতিতে ৫০ জন করে মোট ২০০ জন চাষি তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে মাশরুম চাষের ওপর। এ পল্লীর চাষিরা দৈনিক মাথাপিছু গড়ে ৭-৮ কেজি মাশরুম উৎপাদন করে। বাজারে প্রতি কেজি মাশরুমের দাম ১২০-১৫০ টাকা। মাশরুম চাষে খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় অনেক যুবক-যুবতী নিজেদের বেকারত্ব ঘোচাতে এখন মাশরুম চাষকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, মাশরুম চাষ সমপ্রসারিত করার দায়িত্ব উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ উপকেন্দ্রের। এরপরও পার্বত্য জেলা পরিষদ মাশরুম চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা ও তাদের কৃষি ঋণের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে।
মাশরুম চাষি রুবেশ চাকমা বলেন, একজন মানুষ মাশরুম চাষ করে খুব সহজে বেকারত্ব দূরীকরণসহ নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারে। শুধু মাশরুম চাষ করেই তিনি তার সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাচ্ছেন। তবে মাশরুমের বীজ সংকট রয়েছে বলে তিনি জানান।
মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ উপ-কেন্দ্রের কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান, কামাল হোসেন, আনিসুর রহমান ও বাবলা বড়ুয়া বীজ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ল্যাবরেটরি থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০টি এবং এ পর্যন্ত ৮০ হাজার মাশরুম স্পন প্যাকেট চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চাষিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে চাহিদার তুলনায় বীজ সরবরাহ কখনও কখনও কম হয়। তবে সব কৃষকদের বীজ সরবরাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। লোকবল বাড়ানো ও কিছু সমস্যা সমাধান করা হলে বীজ সংকট কেটে যাবে বলে তারা জানান।
মাশরুমের অনেক গুণ এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী_ এ কথা পুষ্টিবিদদের। চিকিৎসকরাও এ কথা স্বীকার করেন। রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডা. মনীষা চাকমা বলেন, মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সব কিছুর সমন্বয় রয়েছে যা শরীরের ইথুন সিস্টেমকে উন্নত করে। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত মাশরুম খেলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এটি ডায়াবেটিসের আদর্শ খাবার। মাশরুম নিয়মিত খেলে হৃদরোগ ও রক্তচাপ নিরাময় হয়।
মাশরুমে ওষুধি গুণ রয়েছে এবং শরীর সুস্থ রাখতে এটি অনেক সহায়ক। তাই মাশরুম আহরণ সম্পর্কে মানুষকে আরও উদ্বুদ্ধ করা উচিত। এছাড়া মাশরুম চাষ আর্থিক দিক থেকে লাভজনক। মাশরুম চাষে সমস্যা যেমন_ বীজ সংকট ও আর্থিক ঋণের অভাব। এসবের ব্যাপারে সরকারের কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই মাশরুম চাষ আরও সমপ্রসারিত হবে। বাসস (একেএম জহুরুল হক)
Source: http://www.thedailysangbad.com
No comments:
Post a Comment