Pages

Friday, June 20, 2014

মাশরুম চাষ

For any training, mushroom seed etc help please call 
Shafiuzzaman: 01916820458


Thursday, June 19, 2014

মাশরুম চাষ ও বিপণন

মাশরুম চাষ ও বিপণন


মাশরুম চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু মাশরুম চাষ ও বিপণন সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় অনেকেই এ কাজে আশানুরূপ ফল পান না।বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েক ধরনের মাশরুম চাষ করা হয়।
নাম:

ঝিনুক মাশরুম, দুধ মাশরুম, কান মাশরুম, বোতাম মাশরুম, তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম, শীতক মাশরুম এবং খড় মাশরুম।



মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে মাশরুমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

গ্রীষ্মকালীন মাশরুমন্ধ দুধ মাশরুম, খড় মাশরুম। (২) শীতকালীন মাশরুম- শীতক ও বোতাম মাশরুম। (৩) বারোমাসী মাশরুমন্ধঝিনুক মাশরুম।
মাশরুম চাষের উপযোগী তাপমাত্রা :
নাম মাইসোলিয়াম বৃদ্ধির মাশরুমের ফুল
তাপমাত্রা ফোটার তাপমাত্রা
ঝিনুক মাশরুম ২০-২৫ক্কঈ ১৫-৩০ক্কঈ
দুধছাতু ” ২৫-৩৫ক্ক ২৭-৩৫ক্কঈ
খড় ” ২৫-৩০ক্ক ২৮-৩৫ক্কঈ
শীতক ” ২২-২৮ক্ক ১৫-২২ক্কঈ
বোতাম ” ২৪-৩০ক্ক ১৫-২৪ক্কঈ
ঔষধি ” ২২-২৮ক্ক ২৫-৩৫ক্কঈ
মাশরুমের চাষঘর :
মাশরুম চাষঘর তৈরির জন্য পাঁচটি বিষয়কে মূলনীতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অক্সিজেনের উপস্খিতি :
মাশরুম মূলত কাঠের গুঁড়ো থেকে খাবার পায়। এদের ফুল উৎপাদনের সময় বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়। তখন কাঠের গুঁড়ো অক্সিজেনের উপস্খিতিতে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য সহজলভ্য করে যা পাতা গজাতে সাহায্য করে। এ সময় প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাই অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আলো :
মাশরুম ঘরটি আবছা অìধকার যুক্ত হতে হবে। যেন একজন লোক খালি চোখে খবরের কাগজ পড়তে পারেন।
তাপমাত্রা :
মাশরুম ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ক্ক সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার ব্যবস্খা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছনের চালা বা টিনের ঘরে সিলিংয়ের ব্যবস্খা করা যেতে পারে। অন্যদিকে ঘরটি গাছের নিচে হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
আর্দ্রতা :
মাশরুম ঘরের আর্দ্রতা ৪০-৪৫ শতাংশের মধ্যে রাখা ভালো।
কার্বন-ডাই-অক্সাইডমুক্ত :
কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বের করতে হবে। অক্সিজেন কাঠের গুঁড়োকে জড়িত করে খাদ্য উৎপাদনের সময় প্রচুর কার্জন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে ফুল উৎপাদনে প্রতিবìধকতা সৃষ্টি করে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাস থেকে ভারী বিধায় ঘরে নিু অংশে বায়ু প্রবাহ ছাড়া বের হতে চায় না। তাই ঘরের নিচের অংশ বায়ু চলাচলের ব্যবস্খা থাকা আবশ্যক।

চাষ পদ্ধতি :
বীজ সংগ্রহের পর স্পন প্যাকেটের কোনাযুক্ত দুই পাশের ঘাড় বরাবর বেশি উপরে আবার (বেশি নিচে না) ইউ আকারে কেটে কিছু অংশ ছেঁটে ফেলে দেয়ার পর মাশরুমের মাইসোলিয়াম উত্তেজিত হয়। কাটা প্যাকেটকে পাঁচ মিনিট পানিতে চুবিয়ে পানি ঝরিয়ে অথবা কেটে সরাসরি চাষ ঘরের মেঝে অথবা তাকে সাজিয়ে রেখে চাষ করা যায়। অত:পর চাষ ঘরের প্যাকেটের চার পাশের আর্দ্রতা ৪০-৪৫ শতাংশ রাখার জন্য দিনে ২ থেকে ৩ বার (প্রয়োজনে কম বেশি) স্প্রে মেশিনে পানি ছিটাতে হবে, যেন প্যাকেট ও আশপাশ ভিজে যাবে কিন্তু পানি জমবে না। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মাশরুমের অঙ্কুর পিনের মাথার মতো বের হবে। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেমাশরুম তোলার উপযোগী হয়। মাশরুম তোলার এক দিন আগে গায়ে পানি স্প্রে না করলে সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বাজারজাতের সুবিধা হয়। মাশরুমের ফুলের শিরাগুলো ঢিলা হওয়ার আগেই মাশরুম সংগ্রহ করা উত্তম। সংগ্রহের সময় মাশরুম হাত দিয়ে তুলে এনে পরিষ্কার করে গ্রেডিং করতে হবে। তারপর পি পি ব্যাগে ভরে (০.২-০.২৫ মি.মি) প্যাকিং করে সিলিং করে বাজারজাত করতে হবে। প্রথমবার মাশরুম তোলার পর প্যাকেট এক দিন বিশ্রাম অবস্খায় রাখতে হবে এবং পরের দিন কাটা অংশে আবার চামচ দিয়ে চেঁছে ফেলে আগের মতো পানি স্প্রে করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর আবার মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। একইভাবে একটি প্যাকেট থেকে সাত থেকে আটবার মাশরুম সংগ্রহ করে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।

আন্ত:পরিচর্যা :
মাশরুম ঘরের চারপাশ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু মাশরুম একটি স্পর্শকাতর ছত্রাকজাতীয় সবজি। চাষঘরে সকাল-বিকেল পরিমাণমতো পানি স্প্রে করতে হবে। ঘরের মধ্যে পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরিধান করে ঢুকতে হবে। মাশরুমের সারি থেকে সারির মধ্যে ঘন প্যাকেটের একটিতে অন্যটির গায়ের সঙ্গে লাগানো যাবে না। মাশরুমের আকার সুন্দর করতে অতিরিক্ত অঙ্কুর ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে প্রুনিং করে দিতে হবে। মাশরুমের শিরাগুলো ঢিলা হওয়ার পর গায়ে পানি স্প্রে করা যাবে না। গরমের দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্প্রেমেশিন দিয়ে বৃষ্টির মতো ঘরের দেয়াল এবং মেঝে কয়েকবার ভিজিয়ে দিতে হবে। তখন সম্ভব হলে এ সময় ফ্যান ছেড়ে দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ফ্যান বেশি সময় ব্যবহার করলে স্পন অথবা মাশরুম বেশি শুকিয়ে যাবে। সুতরাং পরপরই পানি স্প্রে করতে হবে। মাশরুমের সাধারণত কোনো রোগবালাই নেই। কিংবা পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় না। তবে কখনো কখনো মাছি, তেলাপোকা বা ইঁদুর মাশরুমের ক্ষতি করতে পারে।
এ অবস্খা থেকে রেহাই পেতে চাষঘরের চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ভালো। এ ক্ষেত্রে মাশরুম ঘরের নিচ দিয়ে নেট ব্যবহার করে এবং ঘরের চারপাশে ব্লিচিং পাউডার, কীটনাশক এবং ইঁদুর নাশ ক ওষুধ ব্যবহার করে এ ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কখনো কখনো মাশরুমের অঙ্কুর সবুজ অথবা হলুদ হয়ে মারা যেতে পারে। এ অবস্খা দেখা মাত্রই প্যাকেটগুলো সরিয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্খা নিতে হবে।

মাশরুম সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন :
মাশরুম সংগ্রহ সাধারণত সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ওপর নির্ভরশীল। যদি বেশি দিন সংরক্ষণ করে অথবা অনেক সময় রেখে বাজারজাত করতে হয় তাহলে মাশরুম কিছুটা ছোট অবস্খায় সংগ্রহ করতে হবে। দিনে দিনেই যদি বাজারজাতের সুবিধা থাকে তাহলে মাশরুমগুলোর কিনারা ফেটে যাওয়ার আগে বা পেছনের শিরাগুলো ঢিলা হওয়ার আগে উত্তোলন করতে হবে। সঠিকভাবে প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণের জন্য মাশরুম উত্তোলনের আগের দিন থেকে পানি দেয়া বìধ করতে হবে। মাশরুমগুলো নিচের শক্ত অংশ ধারালো পরিষ্কার ছুরি দিয়ে কেটে পরিষ্কার টেবিলের ওপর আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখতে হবে। অত:পর মাশরুম বড়-ছোট গ্রেডিং করে পিপি ব্যাগের এক-তৃতীয়াংশ খালি রেখে প্যাকেট করে সিলিং করতে হবে। বাজারজাতের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্যাকেটগুলো অতিরিক্ত চাপাচাপি না হয় তাহলে মাশরুম দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।
মাশরুম সংরক্ষণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম এবং আট থেকে ১০ দিন পরপর ফসল তোলা যায়। পলিথিন মোড়কে ২০ থেকে ২১ক্ক সে: তাপমাত্রায় মাশরুম পাঁচ থেকে ছয় দিন ভালো রাখা যায়। পিপি ব্যাগে ভরে সিল করে ফিন্সজেও মাশরুম বেশ কয়েক দিন রাখা যায়।

মাশরুম উৎপাদনের আয়-ব্যয়:
পারিবারিক পর্যায়ে গ্রামে মাশরুম চাষ লাভজনক। গড় হিসেবে ঝিনুক বা দুধ মাশরুম চাষের জন্য ব্যবহৃত খড়ের ৫০ শতাংশ পরিমাণ কিংবা ততোধিক ফলন পাওয়া যায়।
নিুে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পর্যায়ে মাশরুমের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়া হলো :
(ক) পারিবারিক পর্যায়ে ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের আয়-ব্যয়:
১. কাঁচামাল পরিমাণ ব্যয় (টাকা) :
-ধানের খড় ২৫০০ কেজি ১৮৭৫.০০
-স্পন ৩৬৫ ” ৪৩৮০.০০
-পলিথিন ব্যাগ ৪০ ” ৩০০০.০০
-পিপি ব্যাগ ২৫ ” ১৭৫০.০০
-সুতার বল ৫ ” ১০০.০০
-ফরমাল ডিহাইড ৫ ” ২৫০.০০
-ব্যাভিস্টিন ০.২৫ গ্রাম ২৫০.০০
-ব্লিচিং পাউটার ৫ কেজি ১০০.০০
-বিবিধ ব্যয় (মোট খবচের ১০)% ১১৭০.০০
টাকা = ১২৮৭৫.০০

-শ্রমিক ব্যয় (৯০ দিন) ৬৩০০.০০
-চাষঘর নির্মাণ ৫০০০.০০
-স্প্রেয়ার, ড্রাম, ট্রে মোট ব্যয় ২৬১৭৫.০০
মোট আয় : উৎপাদন = ১২৫০ কেজি, বাতিল = ১২৫ কেজি ১০%) নিট উৎপাদন = ১১২৫ কেজিপ্রতি কেজি টা : ৬০/- হিসেবে আয় = ১১২৫কô৬০ = ৬৭,৫০০.০০
মোট লাভ = (আয় ৬৭,৫০০.০০ - ব্যয় ২৬,১৭৫.০০) = ৪১,৩২৫.০০


Wednesday, June 18, 2014

মাশরুম চাষের ২য় পদ্ধতি

 মাশরুম চাষের ২য় পদ্ধতি


১. মাশরুমের ১ কেজি ওজনের একটি বীজ বা স্পন সংগ্রহ করুন।


২. মাশরুম বীজের পলিথিন খুলে ভিতরের কস্পোস্ট গুঁড়ো করুন।

৩. একই সাথে দুই কেজি পরিমাণ ধানের পরিষ্কার ও শুকনো খড় সংগ্রহ করুন।

৪. খড়গুলোকে এক ইঞ্চি মাপে কেটে টুকরো করুন।

৫. পরিমাণ মত পানি ফুটিয়ে নিন।

৬. ফুটন্ত পানিতে টুকরো খড়গুলো এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন৷ এতে খড়গুলো জীবাণু মুক্ত হবে।

৭. খড়গুলো পানি থেকে তুঁলে চিপে পানিশূন্য করে একটি পাত্রে রাখুন।

৮. পাঁচটি পলিব্যাগ নিন।

৯. একটি পলিব্যাগের ভিতরে প্রথমে কিছু খড় বিছিয়ে দিন।

১০. খড়ের উপর মাশরুম বীজের গুঁড়ো দিন।

১১. এভাবে একটি পলিব্যাগের চার স্তরে খড় আর মাশরুম বীজরে গুঁড়ো দিতে হবে। শেষ স্তরে খড় বিছিয়ে দিন।

১২. খুব শক্ত করে পলিব্যাগ বাঁধুন।

১৩. এমনি করে খড় আর মাশরুম বীজের গুঁড়ো দিয়ে প্রতিটি পলিব্যাগ বাঁধুন।

১৪. প্রতিটি পলিব্যাগের চার দিকে ১০-১২টি ছিদ্র করুন।

১৫. ব্যাগগুলোকে বীজে পরিণত হওয়ার জন্য ১৫-১৮ দিন রেখে দিতে হবে।

১৬. ১৫-১৮ দিন পর পলিব্যাগগুলো খুলে ফেলুন৷ এখন সবগুলো পলিব্যাগ থেকে বীজের দলাগুলো বের করে নিন।

১৭. এরপর প্রতিটি বীজের দলা ঝুলিয়ে রাখুন।

১৮. প্রতিদিন ৪-৫ বার করে পানি ছিটিয়ে দিন।

১৯. ৩-৪ দিন পর চারদিক দিয়ে মাশরুমের অঙ্কুর গজাতে শুরু করবে।

২০. ৪-৫ দিন পর খাওয়ার উপযোগী মাশরুম গোড়া থেকে তুলে নিন।

উৎপাদন: এভাবে মাশরুম চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কারণ প্রতিটি পলিব্যাগ থেকে আধা কেজি মাশরুম পাওয়া যাব। পাঁচটি ব্যাগ থেকে আড়াই কেজি মাশরুম উত্‍পন্ন হব।




Wednesday, June 11, 2014

নেপালে দারিদ্র থেকে মুক্তির একটি ভিন্নধর্মী পথ

নেপালে দারিদ্র থেকে মুক্তির একটি ভিন্নধর্মী পথ

মাশরুম চাষ এখন এতোটা লাভজনক যে, বেঁচে থাকার জন্য সরকারী চাকুরী, না হয় বিদেশে কাজের খোঁজে যাবার যে ধারণা রয়েছে, সেগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

কাঠমুন্ডু থেকে খবর দক্ষিণ এশিয়ার জন্য লিখেছেন কোস কৈরালা:


ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পল্লী উন্নয়ণ শিক্ষা বিষয়ে স্বর্ণপদকসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া ৪০ বছরের রঞ্জন বিনায়ক পাশা তাঁর বর্তমান মাশরুম চাষ নিয়েও সমানভাবে গর্বিত, যা তিনি দুই বছর আগে কাঠমুন্ডু উপত্যকার পাশে চোভার নামক এক স্থানে শুরু করে ছিলেন।
    কাঠমুন্ডুর চোভারে নিজের মাশরুম মাচার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রঞ্জন বিনায়ক পাশা। ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানের সাথে স্নাতক পাস করার পর পাসা মাশরুম চাষের ব্যবসা শুরু করেন। যা থেকে তাঁর ছয় সদস্যের পরিবারের জীবন নির্বাহের পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে পারছেন এবং দুই জন যুবককে চাকরি দিয়েছেন।[ছবি তুলেছেন কোস কৈরালা/খবর]
  • কাঠমুন্ডুর চোভারে নিজের মাশরুম মাচার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রঞ্জন বিনায়ক পাশা। ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানের সাথে স্নাতক পাস করার পর পাসা মাশরুম চাষের ব্যবসা শুরু করেন। যা থেকে তাঁর ছয় সদস্যের পরিবারের জীবন নির্বাহের পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে পারছেন এবং দুই জন যুবককে চাকরি দিয়েছেন।[ছবি তুলেছেন কোস কৈরালা/খবর]
  • লালিতপুরের ইমাদলে নিজের উৎপাদিত ওয়েস্টার মাশরুম দেখাচ্ছেন হরি শ্রেষ্ঠা। তিনি জানান, সরকার ঋণ দিয়ে গরীব কৃষকদের আরো বেশি করে সাহায্য করতে পারে।
  • লালিতপুরের ইমাদলে নিজের উৎপাদিত ওয়েস্টার মাশরুম দেখাচ্ছেন হরি শ্রেষ্ঠা। তিনি জানান, সরকার ঋণ দিয়ে গরীব কৃষকদের আরো বেশি করে সাহায্য করতে পারে।

পাশা খবর দক্ষিণ এশিয়াকে বলেন, “অন্য অনেকের মতো, হয় সরকারি চাকুরীতে যোগ দেয়া, না হয় কাজের সন্ধানে বিদেশে যাবার জন্য অনেক চাপ ছিলো আমার উপর। কিন্তু, আমি স্থির সংকল্প ছিলাম নিজের জন্য নতুন কোন উদ্ভাবনী ব্যবসা চালু করা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মাশরুম চাষ করার, কেননা এতে খুব একটা বিনিয়োগের দরকার হয় না”।
এই উদ্যেগের সহায়তায় তিনি এখন ছয় সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি কিছু অর্থ সঞ্চয়ও করছেন। এমনকি তার দু’জন কর্মীও রয়েছে।
মাশরুম এখন তার জীবনে আয়ের উৎস হবার পাশাপাশি তাঁকে আত্মনির্ভরশীলও করে তুলেছে। সেই সাথে, নেপালিদের মাঝে জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারি চাকুরী, না হয় কাজের জন্য বিদেশ চলে যাবার যে প্রচলিত ধারণা রয়েছে, সেটির প্রতি একধরণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
পাশা বলেন, “যদি আপনি এখন এক লাখ নেপালি রুপি (মার্কিন ডলার ১১,৫৫৮) খাটাতে পারেন, তাহলে আগামী চার মাসের মধ্যে তা আপনাকে তিন লাখ নেপালি রুপির (মার্কিন ডলার ৩৪,৭৬৫) বেশি এনে দেবে। তাহলে কেন আপনি সামান্য কাজের জন্য বিদেশে যাবেন?”
২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী ১৯ লাখের বেশি নেপালি যুবক বিদেশে কাজ করছে। যাদের বেশিরভাগ উপসাগরীয় অঞ্চল এবং মালয়েশিয়াতে স্বল্প মজুরীর অধিক শ্রমের নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত।
মাশরুম খামারে একটি ছোট সুফল
এক বিশেষজ্ঞের মতে, স্থানীয় বাজারে মাশরুমের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে। ছত্রাক জাতীয় এক উদ্ভিদ প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ এবং একই সাথে বহুমূত্র রোগের ওষুধ হিসাবেও বহুল ব্যবহৃত।
কৃষি প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের(সিএটিটি) প্রতিষ্ঠাতা কেসরি লক্ষী মাননধরের হিসাবে শুধুমাত্র কাঠমুন্ডু উপত্যকাতেই প্রতিদিন প্রায় চার টন মাশরুম খাওয়া হয়।
১৯৯২ সালে জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে অবসর নেয়ার পর, মাননধর মাশরুম চাষের উন্নয়নে সিএটিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাবেক এই উদ্ভিদ রোগ বিশেষজ্ঞ স্মরণ করে জানান, ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে কাঠমুন্ডুতে প্রায় ৬০০ চাষী ছিলো।
মাননধর খবরকে বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে মাশরুমের চাহিদা বেড়েছে এবং শুধু কাঠমুন্ডু উপত্যকায় মাশরুম চাষের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। উপত্যকার বাইরেও মাশরুম চাষীর সংখ্যা সমানভাবে বেড়ে চলছে।
সিএটিটি’র তথ্য অনুযায়ী, মাশরুম চাষের প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বিদেশ ফেরত নাগরিকেরা। এছাড়া, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকার মাশরুম চাষের প্রতি গরীব মানুষকে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে।
মাননধর -এর মতে, নেপালের চাষীরা তিন ধরণের মাশরুম চাষ করে থাকে: ওয়েস্টার, হোয়াইট বাটন এবং সিতাকি।
তিনি বলেন, “আমি নিজে সিতাকি ধরণের মাশরুমের উপর গবেষণা করেছি এবং ২০০৩ সাল থেকে চাষীদের মধ্যে ছত্রাক বিতরণ করে আসছি। দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে এই ধরণের উচুঁমানের মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে”।
ললিতপুর জেলার ইমাদল এলাকার মাশরুম চাষী হরি শ্রেষ্ঠা জানান, সরকারের উচিৎ মাশরুম চাষীদের আরো বেশি করে সহায়তা দেয়া।
শ্রেষ্ঠা আরো বলেন, “খুব ভালো হতো যদি সরকার দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দিয়ে একটু সহায়তা করতো”। তিনি জানান, কাঠমুন্ডুর বাইরের কৃষকেরা মাশরুম বিপনন করার ক্ষেত্রে খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা অগ্রাধিকার ভিক্তিতে সাধারণ চাষীদেরকে অর্থকরি মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সহায়তা করছে।
কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা বৈকুণ্ঠ অধিকারী বলেন, “সরকার বিভিন্ন জেলায় মাশরুম চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং বীজ বিতরণ করছে”।
তিনি আরো বলেন, “শুধু তাই নয়, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দরিদ্র কৃষকদের জন্য ঋণের পরিধিও বাড়িয়েছে”। 



Friday, June 6, 2014

মাশরুম : ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগের ওষুধ

মাশরুম : ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগের ওষুধ


মাশরুম হলো মহৌষধি গুণসম্পন্ন অত্যন্ত পুষ্টিকর ছত্রাকজাতীয় সবজি। পবিত্র আল কুরআন ও হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, মাশরুম আল্লাহপাকের প্রদত্ত স্বর্গীয় খাবার, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক গুণসম্পন্ন একটি মহৌষধ। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, মিনারেল ও ভিটামিন (সব); চর্বি ও শর্করা (স্বল্প);  ফলিক অ্যাসিড, লৌহ-প্রভৃতি ওষুধি গুণাগুণ ও উপাদান থাকায় এটি মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বর্ধনপূর্বক ডায়াবেটিস; ব্লাডপ্রেসার; কিডনি ও এলার্জি; যৌনরোগ ও অক্ষমতা; আলসার, বাতের ব্যথা প্রভৃতি জটিল ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি মুক্ত করে নিরাময়কের মহাভূমিকা পালন করে থাকে।

আল-কুরআন ও হাদিসের ভাষায় এটিকে একটি স্বর্গীয় খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যে কারণে এটি রোগ নিরাময়ের এক আশ্চর্য নিরাময়ক।
আদিকাল থেকে মাশরুমের ব্যবহার
চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কানাডাসহ পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ মাশরুম আদিকাল থেকে খেয়ে আসছে। আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে মাশরুম বেশি জন্মে এবং পাহাড়ি লোকেরা এটি বেশি খায়।
বিশুদ্ধ সবজি হিসেবে মাশরুমের ব্যবহার
আল্লাহপাক মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছেন শাকসবজি এবং ফলমূলে। ভিটামিন ও মিনারেলই মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। শাকসবজি এবং ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ বেশি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সুস্থ সবল জীবনযাপনের জন্য একজন মানুষের দৈনিক ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি এবং ফল-ফলাদি খেতে হয়। এই পরিমাণমতো খাওয়া আমাদের অনেকের পক্ষে সম্ভবপর হয় না, যে কারণে আমরা অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগে ভুগী।
মাশরুমের পুষ্টিগুণ
আমরা দৈনন্দিন যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকি সেগুলোর চেয়ে মাশরুমের পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি বলে এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীর সুস্থ সবল রাখতে অতি মাত্রায় সাহায্য করে।
মাশরুমের পুষ্টি ভ্যালু তুলনামূলকভাবে অত্যধিক এবং এই প্রোটিন অতি উন্নতমানের এবং মানবদেহের জন্য অতিশয় উপকারী। একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের পরিমাণের উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় এই ৯টি এমাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান। অন্যান্য প্রাণিজ আমিশ যেমন-মাছ, গোশত, ডিম অতি নামী-দামি খাবার হলেও এতে চর্বি সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকায় তা অতি মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে, যার ফলে মেদ-ভুঁড়ির সৃষ্টি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
পক্ষান্তরে মাশরুমের প্রোটিনে-ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অতি স্বল্প এবং কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরের কোলেস্টেরল জমতে পারে না বরং মাশরুম খেলে শরীরে বহু দিনের জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায় এবং শরীর হালকা-পাতলা হয়ে রোগমুক্ত হয়।
১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। পক্ষান্তরে আমরা যা অতি নামী-দামি খাবার হিসেবে মাছ, গোশত, ডিম খেয়ে থাকি তার মধ্যে ১০০ গ্রাম মাছ, গোশত ও ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ হলো ১৬-২২ গ্রাম, ২২-২৫ গ্রাম ও ১৩ গ্রাম মাত্র।
মাশরুমে ভিটামিন ও মিনারেল
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান কাজ। শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন ভিটামিন ও মিনারেল খেতে না পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল হয়ে নানারূপ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান। ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ৫৭-৬০ শতাংশ ভিটামিন ও মিনারেল (অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস ইলেমেন্টসহ) রয়েছে। ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে থায়ামিন (বি-১), রিবোফাভিন (বি-২), নায়াসিন, ফসফরাস, লৌহ, ক্যালসিয়াম ও কপার-৪.৮-৮.৯ মি: গ্রা:, ৩.৭-৪.৭ মি: গ্রা:, ৪২-১০৮ মি: গ্রা:, ৭০৮-১৩৪৮ মি: গ্রা:, ১৫-১৭ মি: গ্রা:, ৩৩-১৯৯ মি: গ্রা: ও ১২-২২ মি: গ্রা: ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে।
কিভাবে খেতে হবে
কাঁচা এবং শুকনা মাশরুম ১৫ বা ২০ মিনিট ফুটানো গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ফেলে দিয়ে ফ্রাই বা সবজির মতো করে, তরকারি বা মাছ গোশতের মধ্যে দিয়ে বা বিবিধ প্রকারের নাস্তা ও মুখরোচক খাবার তৈরি করে খাওয়া যায়।


Wednesday, June 4, 2014

মাশরুম রেসিপি, দেখুন প্লীজ


মাশরুম থেকে তৈরী খাদ্য

মাশরুম থেকে তৈরী খাদ্য


প্রাচীন রোমে মাশরুমের জনপ্রিয়তা এত ব্যাপক ছিল যে, একে বলা হতো ‘ঈশ্বরের খাবার’। ১৭০০ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুমের চাষ শুরু হয়। খাদ্য ছাড়াও বিভিন্ন উল ও রং তৈরিতে এটি ব্যবহার হয়। সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবারের নাম মাশরুম। এর স্ট্যান্ডার্ড নাম ‘Agricus bisporus’ আমাদের দেশে খাদ্য হিসেবে এর প্রচলন খুব বেশিদিন না হলেও বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা অনেক। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে এর প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন মিসরে। প্রায় তিন হাজারেরও বেশি সময় আগে মিসরের ফারাওদের কাছে এটি ছিল জনপ্রিয় এক খাবার। তখন কেবল অভিজাতরাই এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারত। মাশরুম এক প্রকার সাদা সবজি। তবে খাদ্যগুণ বিবেচনায় এর অবস্থান সবজি ও মাংসের মাঝামাঝি হওয়ায় এটিকে সবজিমাংস নামেও অভিহিত করা হয়। এটি ভিটামিন ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। কোনো ব্যক্তির দৈনিক যে পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন তা মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে আছে ১৯ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রোটিন। এছাড়া আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক অ্যাসিড ও লৌহ। এতে চর্বি ও শর্করার পরিমাণ কম এবং আঁশ বেশি থাকায় ডায়াবেটিক রোগীদের আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোবাস্টাটিন ও এন্টাডেনিন থাকায় মাশরুম খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো। এছাড়া এটি ডেঙ্গুজ্বর ও হেপাটাইসিস-বি জন্ডিসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। গর্ভবতী মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতেও মাশরুমের ভূমিকা অনন্য। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড ও লৌহ থাকায় এটি রক্তশূন্যতা দূরীকরণেও কার্যকর। চীনে বর্তমানে ১১ প্রজাতির মাশরুম বিভিন্ন রোগে সরাসরি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশেও মাশরুম গুটিবসন্ত, অ্যাজমা ও উচ্চ রক্তচাপজনিত চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ ব্যাপকতা লাভ করেছে। অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন প্রজাতির মাশরুম উৎপাদন শুরু না হলেও ৮ প্রকার মাশরুম চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মাশরুম একটি অপরিচিত সবজি। সঙ্গত কারণেই এর রান্নার প্রক্রিয়াটি অনেকের কাছেই অজানা। ভালোভাবে রান্না করা হলে এটি আমাদের মুখেও স্বাদ লাগবে। মাশরুম রান্নার কয়েকটি সংক্ষিপ্ত প্রণালী হলো-

ক) মাশরুম সবজি

মাশরুম অন্যান্য দেশী সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়। এর জন্য যে পরিমাণে সবজি নিতে হবে-
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
শুকনো মাশরুম ২০ গ্রাম
আলু ১টি (৫০ গ্রাম)
মটরশুটি ১২০ গ্রাম
টমেটো ১৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ ১০০ গ্রাম
আদা ১০ গ্রাম
রসুন ২ থেকে ৩ টি কোয়া
তেল ১ থেকে ২ চামচ
অন্যমসলা, লবণ প্রয়োজনমত

রান্না প্রণালী


• শুকনো মাশরুম গরম পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে ;

• আলু, মটরশুটি, টমেটো ধুয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ, মটরশুটি ও আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ;
• এরপর আলু, টমেটো ও পেঁয়াজ কুটতে হবে। পেঁয়াজ একটু তেলে ভেজে নিতে হবে ;
• আদা, রসুন বেটে নিতে হবে। মসলা তেলে ভেজে লবণ ও কাটা সবজি দিয়ে নাড়তে হবে ;
• এরপর একটু গরম পানি দিয়ে তরকারী সিদ্ধ করতে হবে ;
• মাশরুম টুকরা করে কেটে সিদ্ধ সবজির সাথে দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট রান্না করে তুলে নিতে হবে।

খ) মাশরুম বিরিয়াণী

মাশরুমের স্বাদ কিছুটা মাংসের মত। এজন্য মাশরুমের সাথে সবজি মিশিয়ে সহজেই সুস্বাদু বিরিয়াণী তৈরি করা যায়। মাশরুম বিরিয়াণী প্রস্তুত প্রণালী হলো-
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
পোলাউর চাল ১৫০ গ্রাম
মাশরুম ১০০ গ্রাম
গাজর ৫০ গ্রাম
মটরশুটি ৫০ গ্রাম
ফুলকপি ৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ ১০০ গ্রাম
ধনেপাতা ২৫ গ্রাম
রসুন ৫ গ্রাম
আদা ৫ গ্রাম
১০ কাঁচা মরিচ ৫ গ্রাম
১১ টক দই ৫০ গ্রাম
১২ তেল/মাখন ৫০ গ্রাম
১৩ অন্যমসলা, লবণ, পানি প্রয়োজনমত

রান্না প্রণালী


• চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মসলা বেটে নিতে হবে ;

• পেঁয়াজ সোনালী করে ভেজে রাখতে হবে ;
• মাশরুম পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে ভেজে রাখতে হবে ;
• সবজি ধুয়ে কেটে সিদ্ধ করে নিতে হবে ;
• চাল তেলে ভেজে সামান্য পানি দিয়ে প্রায় রান্না করার অবস্হায় নিয়ে আনতে হবে ;
• দই ভাল করে ফেটে ধনে পাতা কুচির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ;
• এরপর সিদ্ধ সবজি, মাশরুম, দই মিশাতে হবে ;
• একটি পাত্রে আবার খানিকটা তেল/মাখন দিয়ে চুলায় দিতে হবে। এরপর সবজি, মাশরুম পেঁয়াজ এর মিশ্রণ দিয়ে একটু নাড়তে হবে এবং প্রায় সিদ্ধ পোলাউর চাল মিশিয়ে ১০ মিনিট হালকা আঁচে চুলায় রাখতে হবে ;
• তুলে পোলাউর উপর ভাজা পেঁয়াজ, কাজু বাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।

গ) মাশরুম ফ্রাই

নাস্তা হিসেবে মাশরুম ফ্রাই চা-এর সাথে পরিবেশন করা যায়। ইফতারীর সময় বেসনের সাথে সবজি দিয়ে পাকুড়া তৈরির মত করে সবজির পরিবর্তে মাশরুমের পাকুড়া তৈরি করা হলে তা যথেষ্ট সুস্বাদু হবে।
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
মাশরুম ১০ থেকে ১২টি
ডিম ১ টি
বেসন ১ থেকে ২ টেবিল চামচ
লবণ, গোল মরিচ গুড়া, সয়াবিন তেল পরিমাণ মত

রান্না প্রণালী


• মাশরুম ধুয়ে পরিষ্কার করে পানি ছাড়িয়ে নিতে হবে ;

• একটি পাত্রে ডিম ভেঙ্গে বেসন, লবণ, গোল মরিচের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে প্রয়োজনমত পানি দিয়ে ঘন করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মাশরুমগুলো মিশ্রণে ভালোভাবে ডুবিয়ে নিতে হবে ;
• পপাত্রে তেল গরম করতে হবে এবং একত্রে কয়েকটি মাশরুম ভেজে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।

ঘ) মাশরুম হালিম

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের ডালের সাথে মাংস মিশিয়ে হালিম তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে হালিমের জন্য প্রয়োজনীয় ডালের সাথে মাশরুম মিশিয়ে মাশরুমের হালিম বানানো যায়। তাছাড়া পাতলা ডালের সাথে মাশরুম দিয়ে মাশরুম স্যুপও তৈরি করা যেতে পারে।
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
মুগ ডাল ১২৫ গ্রাম
মসুর ডাল ২৫০ গ্রাম
ছোলার ডাল ১২৫ গ্রাম
মাশরুম তাজা ৫০০ গ্রাম (শুকনো হলে ৫০ গ্রাম)
পেঁয়াজ কুঁচি, আদা, রসুন, জিরার গুড়া, হলুদের গুড়া, তেজপাতা, লবণ ও পানি পরিমাণ মত

রান্না প্রণালী


• মাশরুম ধুয়ে পানি ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে রাখতে হবে ;

• ডালগুলো ধুয়ে পানিতে ছাড়িয়ে নিতে হবে ;
• মুগ ডাল সামান্য ভেজে ধুয়ে মসুর ও ছোলার ডালের সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করার সময় ডালের সাথে আদা, রসুন, পেঁয়াজ কুঁচি ও লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। ডাল খুব ঘন করা যাবে না ;
• কাটা মাশরুম পেঁয়াজ কুচির সাথে ১ থেকে ২ মিনিট গরম তেলে হালকাভাবে ভেজে নিতে হবে। তারপর সিদ্ধ ডালের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ;
• সামান্য জিরার গুড়া এবং গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।


ঙ) চিকেন মাশরুম স্যুপ

আমাদের দেশের রেস্তেরাগুলোতে চিকেন কর্নস্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। চিকেন কর্নের সাথে মাশরুম দিলে স্যুপের পুষ্টিমাণ বাড়বে এবং স্বাদও ভিন্নতর হবে। চিকেন মাশরুম স্যুপ তৈরি করার জন্য নীচের উপরকরণগুলোর প্রয়োজন হবে।
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
মাশরুম ২৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ ২টি
মুরগীর স্টক ৪ কাপ
পানি ৩ কাপ
কর্নফ্লাওয়ার ১ কাপ
বাটার অয়েল ২০ গ্রাম
আদা ২৫ গ্রাম
লবণ, টেস্টিং সল্ট পরিমাণ মত

রান্না প্রণালী


• মুরগির স্টক তৈরি করার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগি ২.৫০ লিটার পানিতে পরিমাণ মত লবণ আদা দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। মাংসগুলো নরম হয়ে আলাদা হয়ে গেলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মুরগির হাড়গুলো আলাদা করতে হবে এবং মাংস স্টক পানির সঙ্গে একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে ;

• মাশরুম ও পেঁয়াজ চাকা করে কেটে নিতে হবে। তারপর বাটার অয়েল দিয়ে হালকাভাবে ভেজে নিতে হবে ;
• এবার এসব ভাজা মাশরুম, মুরগির হাড় ও মাংস সিদ্ধ স্টক পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন মত লবণ ও একটি কাপে অল্প পানিতে কর্নফ্লাওয়ার গুলিয়ে নিতে হবে ;
• ২ থেকে ৩ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে ;
• প্রয়োজন মত টেস্টিং সল্ট দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

চ) মাশরুম চিংড়ি

চিংড়ি মাছ এমনিতেই যথেষ্ট সুস্বাদু মাছ। এ মাছের সাথে মাশরুম রান্না করলে একটু ভিন্ন স্বাদের তৈরি করা যায়। নীচে রান্নার উপকরণ ও প্রণালীর বর্ণনা দেওয়া হলো-
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
মাশরুম ৫০ গ্রাম
মাঝারি ধরণের চিংড়ি ২০০ গ্রাম
পেঁয়াজ , মরিচ, লবণ, আদা, হলুদ, সয়াবিন তেল পরিমাণ মত

রান্না প্রণালী


• মাশরুম ধুয়ে কেটে পানি ছাড়িয়ে রাখতে হবে ;

• চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ;
• তেল, লবণ ও প্রয়োজনীয় মসলা দিয়ে মাছ তেলে ভেজে নিতে হবে ;
• মাছ প্রায় হলে আসলে মাশরুম চিংড়ি মাছের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে ;
• ৫ থেকে ৭ মিনিট নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে ;
• গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।


ছ) মাশরুম স্যান্ডউইচ

স্যান্ডউইচ বর্তমানে শহরের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। দ্রুত তৈরি এবং সহজে বহন করার কারণে স্যান্ডউইচ সব বয়সের মানুষের কাছে পরিচিত। স্যান্ডউইচ সাধারণত: মাংস, মাছ কিংবা ডিম দিয়ে হয়। মাছ, মাংস, ডিমের পরিবর্তে মাশরুম ব্যবহার করা হলে স্যান্ডউইচ স্বাদ ও পুষ্টিমাণ ভিন্নরকমের হবে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা এই স্যান্ডউইচ খেতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে বাটারের পরিবর্তে কোলস্টেরল মুক্ত কর্ন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
মাশরুম ৫০ গ্রাম
বাটার ৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ, লবণ পরিমাণ মত
পাউরুটি ১টি

রান্না প্রণালী


প্রথমে মাশরুমগুলো স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। তারপর ফ্রাইপ্যানে বাটার/কর্ন অয়েল বা ভেজিটেবল ঘির মধ্যে পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে মাশরুমগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে ;

তারপর দুই পিস পাউরুটির ভিতর ভাজা মাশরুমগুলো সুন্দর করে স্প্রেড করে দিন। এরপর মিয়োনিজ, টমেটো, পেঁয়াজ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

জ) মাশরুম ওমলেট

ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ডিমের সাথে মাশরুম মিশালে সেই খাবারের মান ও গুণ দু-ই বৃদ্ধি পায়। নীচে মাশরুম ওমলেট রান্নার উপকরণ দেওয়া হলো-
ক্রমিক নং উপকরণ পরিমাণ
মাশরুম ১০০ গ্রাম
বাটার ১৫ গ্রাম
ডিম ২টি
দুধ ১ থেকে ২ কাপ
লবণ ও মরিচ গুড়া পরিমাণ মত

রান্না প্রণালী


• মাশরুম ধুয়ে পরিষ্কার করে কেটে নিতে হবে ;

• অল্প তাপে বাটার দিয়ে মাশরুমগুলো ৫ থেকে ৭ মিনিট ভেজে নিতে হবে ;
• ডিম ও দুধ একসঙ্গে ফেটে নিয়ে মাশরুমের কড়াইতে ঢেলে নিতে হবে ;
• প্রয়োজন মত লবণ ও মরিচের গুড়া দিয়ে ভাল করে নেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
• যাদের কোলস্টেরল সমস্যা আছে তারা ডিমের কুসুমটি বাদ দিয়ে সাদা অংশের সাথে মাশরুম মিশিয়ে পুষ্টিকর উপাদেয় ওমলেট তৈরি করে খেতে পারেন।

মাশরুমের আচার


• রান্না ছাড়াও তাজা মাশরুম তেল ও মসলা দিয়ে আচার বানিয়ে রাখা যায়। আচারের জন্য দুধ মাশরুম সবচেয়ে ভাল। এজন্য নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে-

• তাজা মাশরুম পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে ;
• রসুন, আদা, গোল মরিচ ও সরষের গুড়া এবং গরম মসলা মিশিয়ে সামান্য তেলে মাশরুম ভেজে প্রায় শুকিয়ে ফেলতে হবে ;
• ঠান্ডা করে লবণ ও ভিনেগার মিশাতে হবে ;
• তেল গরম করে ঠান্ডা করতে হবে। সম্পূর্ণ মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে তেলের মধ্যে রাখতে হবে ;
• বোতলে ঢুকাবার আগে বোতলটি ভালোভাবে ঢাকনাসহ সিদ্ধ করে নিতে হবে।
• বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংভরতা অর্জন করেছে কিন্তু এথনো পুষ্টিতে সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হযনি। বাংলাদেশের পুষ্টিতে সহজ সরল এবং স্বল্প পুজিতে পুষ্টির উপকরণ যোগান দিতে মাশরুম অনন্য। এখন প্রয়োজন উদবুদ্ধকরণের মাধ্যমে মাশরুম উৎপাদন, বিপনণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং এর ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর ভুমিকা। মাশরুম দিয়ে এদেশের পুষ্টি এবং কৃষিকে সমৃদ্ধ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মাশরুম সমৃদ্ধ পরিকল্পিত কৃষির প্রত্যাশা আমাদের সবার কাম্য।


Tuesday, June 3, 2014

জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র

জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র


মাশরুমঃ মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি সবজি যাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। বিশ্বের প্রায় ১০০ টি দেশে এটি অনেক মূল্যবান খাদ্য হিসেবে পরিচিত। মাশরুম অনেক জটিল রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

ঠিকানাঃ সোবহানবাগ, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার, ঢাকা।
ফোনঃ ৭৭৪২২৪৯,৭৭১০৬৪৬,৭৭৪২৪৯৬, ফ্যাক্সঃ ৭৭১০৬৪৬

প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত সেবাসমূহঃ
  •     মাশরুমের নতুন নতুন জাত উন্নয়ন ও দেশোপযোগী চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ।
  •     মাশরুম চাষ সম্পর্কিত প্রযুক্তি কৃষকদের প্রদান।
  •     প্রচারের মাধ্যমে মাশরুমকে জনপ্রিয় করে তোলা।
  •     মাশরুম চাষী ও ভোক্তাদের মাঝে সুদৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি করা।
  •     মাশরুম বাজারজাতকরণের পরামর্শ প্রদান।
  •     মাশরুমজাত পণ্যের গুণগতমান নির্ধারণ ও সনদ প্রদান।
  •     চাষীদের ভাল মানের বীজ প্রদান।
  •     ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় আকারের মাশরুম শিল্প প্রতিষ্ঠানে সহযোগীতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
  •     মাশরুম রপ্তানিতে কারিগরী সহায়তা প্রদান।
  •     চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় মাশরুম বিষয়ক যে কোন নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সহযোগীতা করা।
  •     সংগঠনের মাধ্যমে চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় সহযোগীতা প্রদান।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্যঃ
  •     মাশরুম নিয়ে গবেষণা করা।
  •     মাশরুম চাষে মানুষকে আগ্রহী ও দক্ষ করে তোলা।
  •     মাশরুমজাত পণ্যের গুণগতমান নির্ধারণ।
  •     মাশরুম চাষের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা।
  •     মাশরুমের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা।

বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশে রপ্তানী করে অর্থ উপার্জন সম্ভব ।। দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাশরুম চাষ এখন জনপ্রিয়

বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশে রপ্তানী করে অর্থ উপার্জন সম্ভব ।। 
দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাশরুম চাষ এখন জনপ্রিয়



আলমগীর আলম ।। পটিয়া
পুষ্টি, ঔষুধি গুণে ভরা হারবাল সবজি হিসেবে খ্যাত মাশরুম চাষ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে করে বেকার যুবক-যুবতীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বহু গুণে। ইতোমধ্যে অনেকে এ মাশরুম চাষ করে সফলতার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিদেশেও রফতানী করছে মাশরুম। কম সময়ে স্বল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষে সফলতা আসায় মাশরুম চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সখ করেও অনেকে নিজ বাড়ীতে মাশরুম চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবেও বাড়তি স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে।
মাত্র স্বল্পসময়ের মধ্যে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে পুষ্টিগুণে সম্মৃদ্ধ এই মাশরুম চাষ। উপজেলা পর্যায় সরকারীভাবে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্প পুঁজির ব্যবস্থা করা গেলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার বেকারের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করাও সম্ভব হবে বলে মনে করছেন মাশরুম চাষীরা।
মাশরুম প্রশিক্ষনার্থী আনসারুল হক জানান মাশরুম এক প্রকার উদ্ভিদ, ঠিক যেন ব্যাঙের ছাতার মত দেখতে। মাশরুম নিয়মিত খেলে ক্যানসার, উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদরোগ, ব্রংকাইটিস, এজমা, জন্ডিস, রক্ত শূন্যতা, যৌন অক্ষমতা, কিডনি, আলসার, পাইলস, বন্ধ্যাত্ব, ডেংগু জ্বর, প্রভৃতি জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাছাড়া মাশরুম টনিকের মত মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরে জমে থাকা কোলেষ্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এ কারণে উন্নত বিশ্বে মাশরুমকে দেয়া হয় আলাদা মর্যাদা ও গুরুত্ব।
চীন, জাপানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে দীর্ঘ জীবন লাভের খাবার হিসেবে মাশরুমের কদর বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। স্যুপ, মাছ, ফ্রাই, মাংস, ডিম, সবজি, নুডুল্‌স, ওমলেটকারীসহ বিভিন্ন খাদ্যের সাথে মাশরুম খাওয়া যায়। বর্তমানে দেশের নামী-দামী ফাস্ট ফুডের দোকানে মাশরুমের খাদ্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা মীম মাশরুম জোনের স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আবু ছালেহ জানান ২০০৪ সাল থেকে তারা বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে সফলতা পেয়েছে। বর্তমানে তারা দৈনিক ৩০-৩৫ কেজি মাশরুম উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া মাশরুমের তৈরী খাদ্য সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে তৈরী করছে। এর মধ্যে মাশরুম আচার, জেলী, সস, অন্যতম। তিনি জানান, সরকারীভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বিদেশে মাশরুম রপ্তানী করার ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। ফলে তাদের ঢাকায় গিয়ে মাশরুম বিদেশে রপ্তানী করতে সীমাহিন কষ্ট পেতে হয়। এ ব্যাপারে সরকারী সুযোগ সুবিধা ও সহযোগিতা দেয়ার কথা বললেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী জানান, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মাশরুম চাষ গ্রাম পর্যায়ে মানুষের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাশরুম প্রশিক্ষন কেন্দ্র চালু করা গেলেই হাজার হাজার মানুষের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি সাধারন মানুষ মাশরুম চাষে এগিয়ে আসবে। তাই সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।




Sunday, June 1, 2014

বাংলাদেশে মাশরুম চাষের সম্ভাবনা

বাংলাদেশে মাশরুম চাষের সম্ভাবনা


আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসত বাড়ীর আনাচে কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিম্বা স্তুপিকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতি সাদা রঙের এক ধরণের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্র-তত্র গজিয়ে উঠা এ সকল উদ্ভিদ খাবার উপযোগী নয়। তবে প্রায় অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদিত হয় তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সারা বিশ্বে সব্জি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে ইংরেজীতে “মাশরুম” বলা হয় । মাশরুম এক ধরণের ছত্রাক যা পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন সবজি। মাশরুমের চাষ এবং এর ব্যবহার আমাদের দেশে এখনও তেমন প্রসার ঘটেনি। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে শুধুমাত্র চায়নীজ রেস্তোরা গুলোতে মাশরুম স্যুপ একটি উপাদেয় খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। তবে পৃথিবীর বহু দেশে স্যুপ ছাড়াও ইহা অন্যান্য সব্জীর ন্যায় খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাশরুম একদিকে যেমন অত্যন্ত কম সময়ে উৎপাদিত হয় তেমনি ইহা রান্না করতেও সময় কম লাগে। মাত্র তিন-চার মিনিটেই মাশরুম সিদ্ধ হয়ে যায়।


মাশরুমের পুষ্টিমানঃ
মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এন্জাইম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে থাকে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ০.৮ গ্রাম স্নেহ, ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.৪ গ্রাম আঁশ, ৪.৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মিঃ গ্রাম কেলসিয়াম, ১১০ মিঃ গ্রাম ফসফরাস, ১.৫ মিঃ গ্রাম লৌহ, ০.১৪ মিঃ গ্রাম ভিটামিন বি১, ০.১৬ মিঃ গ্রাম বি২, ২.৪ মিঃ গ্রাম নায়াসিন, ১২ মিঃ গ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ কেলোরি। সাধারনতঃ মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশী এবং প্রচলিত শাক-সব্জীর চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাক-সব্জীর চেয়ে চারগুণ। এছাড়াও এতে যে ফলিক এসিড থাকে তা এ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমুত্র রোগী এবং যারা মোটা তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার। ইহা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজেই হজম হয়। 



মাশরুমের ঔষধিগুণঃ
মাশরুমে যেসকল ঔষধিগুণ রয়েছে তা নিম্নে বর্ণিত হলো-
- মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা মানব দেহের ’ইমুন সিষ্টেম’ কে উন্নত করে। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত মাশরুম খেলে তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ মতা বৃদ্ধি পায়। 
- মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।
- শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাস্টনিন এবং এনটাডেনিন মাশরুমে বিদ্যমান থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
- মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি থাকায় তা শিশুদের হাড় ও দাঁতের গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও লৌহ থাকায় তা রক্ত শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়া লিংকজাই-৮ নামক পদার্থ বিদ্যমান থাকায় তা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস জনিত জন্ডিসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
- মাশরুমে আছে ই-উ গুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়েড ও বেনজোপাইরিন যা টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
-মাশরুমে ট্রাইটারপিন নামক উপাদান থাকায় তা বর্তমানে এইডস’এর প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
-মাশরুমে ইলুডিন-এম এবং ইলুডিন-এস নামক উপাদান রয়েছে যা আমাশয়ের জন্য উপকারি।
-মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে গাইকোজেন রয়েছে যা শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
-মাশরুমে এডিনোসিন থাকায় এটি ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। 
- মাশরুমে স্ফিঙ্গলিপিড এবং ভিটামিন বি-১২ বেশি থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্র ওস্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই মাশরুম খেলে হাইপারটেনশন দূর হয় এবং মেরুদন্ড দৃঢ় করে। 
- মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম থাকায় তা হজমে সহায়ক, রুচি বর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরামক হিসেবে সহায়তা করে। 
- মাশরুমে নিউকিক এসিড এবং এন্টি-এলার্জেন থাকায় তা কিডনী রোগ ও এলার্জি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। 
- মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড থাকায় এটা নিয়মিত খেলে চুল পাকা ও চুল পড়া প্রতিরোধ করে। 

মাশরুম চাষের উপযোগী স্থান ও সময়ঃ 
মাশরুম চাষ বেশ লাভজনক। মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। ইহা চাষের জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজ লভ্য। বেকার যুবক এবং মহিলারা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সব্জীর তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশী এজন্য ইহা চাষ করা লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানীর সুযোগ বিদ্যমান। গ্রীষ্মকালে যে কোন চালা ঘরের নীচে এবং বারান্দায় এর চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে মাশরুম চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে ”স্ট্র মাশরুম” এবং শীতকালে ”ওয়েষ্টার” জাতের মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। এদু’টি জাত ছাড়াও ঋষি মাশরুম, মিল্কী মাশরুম, শিতাকে মাশরুম, বাটন মাশরুম প্রভৃতি জাতের মাশরুম রয়েছে। 

মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ 
(ক) মাশরুম এর বীজ বা স্পন।
(খ) বেড বা মাদা তৈরীর জন্য ধানের শুকনা খড়।
(গ) বেডের স্তরে ও উপরে ব্যবহারের জন্য মিলের ছাঁট তুলা/শিমুল তুলা এবং ধানের কুঁড়া/ছোলার বেসন।
(ঘ) খড় ভেজানোর জন্য ড্রাম বা মাটির বড় চাড়ি/গামলা।
(ঙ) বেডের তলায় ও উপরে ব্যবহারের জন্য পলিথিন কাগজ।
(চ) মাপ মত বেড তৈরীর জন্য একটি কাঠের তলা বিহীন বাক্রা (১ মিটার * ৩০ সেঃমিঃ * ৩০ সেঃমিঃ আয়তনের)।

মাশরুম চাষ পদ্ধতিঃ
- পরিমাণ মত শুকনো পরিস্কার ধানের খড় সংগ্রহ করে পানি ভর্তি ড্রামের মধ্যে কিম্বা মাটির বড় চাড়ির মধ্যে ভালভাবে নেড়েচেড়ে ভিজিয়ে নিন।
- ভেজানো খড়গুলো একটা ঝুড়িতে রেখে অতিরিক্ত পানি বের হতে দিন।
- এবার ভেজা খড়গুলো একটা পলিথিন কাগজের উপর স্তুপ করে রেখে তার উপর আর একটি পলিথিন কাগজ দিয়ে ভালভাবে ঢেকে ২৪ ঘন্টা রেখে দিন।
- পরিমাণ মত শিমুল তুলা কিম্বা মিলের পরিত্যক্ত তুলা একটি পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন।
- যে ঘরে বা স্থানে মাশরুম চাষ করা হবে সে জায়গা ভালভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে মেঝেতে পলিথিন বিছিয়ে দিন।
- এক মিটার লম্বা, এক মিটার চওড়া এবং ৩০ সিঃমিঃ উচু তলাবিহীন কাঠের ফরমা বা বাক্রাটি পলিথিন বিছানো কাগজের উপর রাখুন।
এখন কাঠের ফরমার মধ্যে সমানভাবে ভিজা খড় একটু চাপ দিয়ে সাজাতে থাকুন যেন বিছানো খড়ের স্তর ৮-১০ সেঃমিঃ পুরু বা উচুঁ হয়।
- চারিদিকে খড়ের স্তুপের কিনার থেকে ৫ সেঃমি ছেড়ে এক সেঃমি পুরু ও ৫ সেঃমিঃ চওড়া করে ভিজা তুলা ঠিকমত বিছিয়ে দিন।
- বীজ ছিটানোর পর একই নিয়মে পুনরায় ৮-১০ সেঃমিঃ করে খড় বিছিয়ে ২য় স্তর তৈরী করে একইভাবে তুলা বিছিয়ে তাতে মাশরুম বীজ ছড়িয়ে দিন।
- এরপর একই ভাবে ৩য় স্তর তৈরী হলে বেডের উপরের সমস্ত অংশে তুলা ছড়িয়ে তার উপর মাশরুম বীজ বুনে পুনরায় হালকাভাবে সামান্য খড় ছিটানোর পর বাক্রাটি ভরে গেলে সাবধানে তুলে নিন।
- একই নিয়মে পাশাপাশি ১০সেঃ মিঃ ফাঁকে ফাঁকে একটির পর একটি বেড প্রয়োজন মত বসাতে থাকুন। 
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাজানো শেষ হলে সমস্ত বেডগুলো পলিথিন কাগজ অথবা চট দিয়ে ঢেকে দিন।

মাশরুমের পরিচর্যাঃ
- মাশরুম বেডে বীজ বপনের পর থেকে গজানোর পূর্ব পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ সেঃ এর মধ্যে রাখা দরকার এবং মাশরুম গজাতে আরম্ভ করলে তাপমাত্রা ৩০-৩৫ সেঃ এর মধ্যে রাখতে হবে।
- পলিথিন দ্বারা ভালভাবে ঢেকে তাপ বাড়ানো এবং খুলে দিয়ে তাপ কমানো যায়। কাজেই অবস্থার প্রেক্ষিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।
- মাশরুম বেডকে পোকা-মাকড় ও জীব-জন্তুর উপদ্রব থেকে রা করুন।
- মাশরুম বেড সব সময় ভেজা থাকা দরকার। বেডের উপরি ভাগ শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করুন।

মাশরুম সংগ্রহ :
- মাশরুম বেডে বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যে আলপিনের মাথার আকারে মাশরুম গজানোর লক্ষণ দেখা যায়। মাত্র ২ দিনের মধ্যে এ অবস্থা পেরিয়ে মাশরুম দেশীয় মুরগীর ডিমের আকার ধারণ করে। এ অবস্থা মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- সংগ্রহে বিলম্ব হলে মাশরুম ছাতার মত হয়ে ফুটে যায় এবং এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই সমযমত মাশরুম সংগ্রহ করা আবশ্যক।
- একটা বেড থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত দফায় দফায় মাশরুম সংগ্রহ করা যায়।
- মাশরুম সংগ্রহ শেষ হলে বেডের সমস্ত আবর্জনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে সেখানে পরের বারের জন্য মাশরুম চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

মাশরুম সংরক্ষণঃ
- মাশরুম তাজা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া উত্তম।
- পলিথিন ব্যাগে সাধারণ ভাবে মাশরুম ১০-১৫ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে।
- রিফ্রিজারেটরে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মাশরুম অনায়াসে সংরণ করা যায়।
- রোদে শুকিয়ে নিয়ে মাশরুম দীর্ঘ সময় ধরে সংরণ করা যায়। 
- রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট টিনে বহুদিন যাবৎ সংরণ করে খাওয়া চলে।

অন্যান্য তথ্যাবলীঃ
- ৫ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া ঘরের মেঝেতে পূর্বে বর্ণিত পরিমাপের ৩০ টি বেডে একত্রে মাশরুম চাষ করা যায়।
- তাক বা র‌্যাক তৈরী করে তাতে চাষ করলে এ সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি করা যায়।
- প্রতি বেডে গড়ে এক কেজি ’ষ্ট্র’ জাতের মাশরুম ফলে।
- বেড প্রতি ৩-৪ কেজি খড়, ২০০ গ্রাম তুলা এবং ১০০-১৫০ গ্রাম মাশরুম বীজের প্রয়োজন হয়।
- বীজ বপন থেকে আরম্ভ করে মাশরুম সংগ্রহ পর্যন্ত একটা ফসল চক্র শেষ হতে সর্বমোট ২০ দিন সময় লাগে। অন্য কোন সব্জী এত তাড়াতাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়।
- এক কেজি মাশরুমের বর্তমান বাজার মূল্য ১৫০/= টাকা থেকে ২০০/- টাকা। (গড়ে ১৭০/- টাকা।)
- এক কেজি মাশরুম উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৭০/= টাকা।
- ৫ মিটার দ্ধ৪ মিটার আয়তনের একটা ঘরের মেঝেতে ৩০ টি বেডে মাশরুম চাষ করে প্রতি ২০ দিনে খরচ বাদে ৩০০০/= টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব (১৭০-৭০=১০০ টাকা * ৩০ টি বেড = ৩০০০/= টাকা)। বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে উৎপাদনের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
- ৫ মিটার *৪ মিটার আয়তনের একটা ঘরে বাঁশের তাক তৈরী করে (৩০টি * ৪ তাক) ১২০ টি বেডে মাশরুম চাষ করে প্রতি ২০ দিনে ১২০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব হবে। উৎপাদিত মাশরুম প্রতিকেজি বর্তমান বাজার মূল্য ১৭০/= টাকায় বিক্রয় করলে ( ১৭০/ টাকা *১২০কেজি)=২০,৪০০/= টাকা পাওয়া যাবে। যা থেকে ৮,৪০০/- টাকা 
খরচ বাদ দিয়ে ১২,০০০/-টাকা নীট মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। 

মাশরুম রন্ধন প্রণালীঃ 
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে মাশরুম দ্বারা খাবার প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের চায়নীজ রেস্তোরা গুলোতে প্রধানতঃ মাশরুমের সুপ উপাদেয় খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া মাশরুম ভাজি হিসেবে কিম্বা অন্যান্য সব্জীর সাথে একত্রে রান্না করে খাওয়া যায়। নারিকেল দিয়ে যেভাবে চিংড়ি রান্না করা হয় অনুরূপ ভাবে চিংড়ি দিয়ে মাশরুম রান্না খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। নিম্নে মাশরুম দ্বারা রান্না করা কয়েকটি খাবার তৈরীর নিয়মাবলী দেয়া হলো।

(১) মাশরুম সুপ (৫ জনের জন্য)
উপকরণঃ 
মাশরুম - ৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ - ১ টা (বড়)
দুধ - ২ কাপ
পানি - ৩ কাপ
কর্ণ ফাওয়ার - ১ টেবিল চামচ
বাটারওয়েল/সয়াবীন তৈল - ২০ গ্রাম
লবণ - পরিমাণ মত
রন্ধন পদ্ধতিঃ-
(ক) মাশরুম এবং পেঁয়াজ চাকা চাকা করে কাটুন। এগুলো হাঁড়িতে ফেলে তৈল/বাটারওয়েল দিয়ে হালকা ভাবে ভেজে নিন।
(খ) এবার দুধ ও পানি ঢেলে পাঁচ মিনিট সময় ফুটিয়ে নিন।
(গ) একটা কাপে অল্প পানিতে কর্ণ ফাওয়ার গুলো হাঁড়িতে ঢেলে পাঁচ মিনিট সিদ্ধ করে নামিয়ে গরম থাকতেই পরিবেশন করুন।

(২) মাশরুম চিকেন মিক্রাড সুপ (৫ জনের জন্য)
উপকরণঃ 
মাশরুম - ১০০ গ্রাম
বাটার/তৈল - ১০ গ্রাম
দুধ - ২৫০ মিঃ লিঃ
মুরগীর মাংসের কীমা - ৫০০ গ্রাম
ময়দা - ১ টেবিল চামচ
ডিমের কুসুম - ১ টা
ক্রীম - ২ টেবিল চামচ
লবণ - পরিমাণ মত
রন্ধন পদ্ধতি
(ক) মাশরুম পিঁষে নিয়ে দুধ, লবণ, মরিচ ও মাংস দিয়ে দশ মিনিটকাল ফুটান।
(খ) অন্য একটা পাত্রে বাটার/তৈল দিয়ে ময়দা ভেঁজে ধীরে ধীরে সুপের মধ্যে ঢেলে নাড়তে থাকুন।
(গ) এবার চুলা থেকে নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হলে ডিমের কুসুমটি সুপের সাথে মিশিয়ে দিন।
(ঘ) পরিবেশনের আগে আবার সামান্য গরম করে ক্রীম মিশিয়ে নিন।

(৩) মাশরুম ফ্রাই
উপকরণ
৬ টি মাঝারী সাইজের মাশরুম
ডিম - ১ টি
ময়দা - ২ টেবিল চামচ
সামান্য বেকিং পাইডার, পরিমাণ মত লবণ এবং গোলমরিচ। শুকনা পাউরুটির গুড়া এবং সোয়াবিন তৈল।

রন্ধন পদ্ধতিঃ
(ক) একটা পাত্রে ডিম ভেংগে ময়দা, লবণ, মরিচ ইত্যাদির সাথে প্রয়োজন মত পানি মিশ্রিত করে পেষ্টের মত করুন।
(খ) মাশরুমগুলো উক্ত ঘন পেষ্টের মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে পাউরুটির গুড়োর উপর রোল করুন।
(গ) পাত্রে তৈল গরম করে তাতে কয়েকটি মাশরুম একত্রে ভেজে গরম থাকতে থাকতে পরিবেশন করুন।

মাশরুম দ্বারা উপরোক্ত খাদ্যগুলি ছাড়াও সস, চটপটি, নিরামিশ, ভর্তা, আচার, চাটনি প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী করা যায়।