মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম প্রায় এক দশক আগে। চাষের পুরনো অভিজ্ঞতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় মাশরুম বীজ সংগ্রহ করতে মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠান সাভারে যাই। দুপুর ১২টার সময় মাশরুম সেন্টারে গিয়ে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সন্ধান পেলাম না। অভ্যর্থনা কেন্দে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর চলে আসব- এমন সময় একজনকে পেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: মাশরুমের সাম্প্রতিক জাত সম্পর্কে কার কাছ থেকে জানতে পারব?
লোকটি হাতের ইশারা করে বললেন-
: পশ্চিম দিকে যান, ওখানে ডক্টর সাইদ কাজ করছেন, তার কাছেই সব জানতে পারবেন।
মনটা আনন্দে ভরে উঠল। যাক, অবশেষে একজন পিএইচডি করা লোক পাচ্ছি। অনেক কিছুই তাহলে জানা যাবে। পশ্চিম দিকে মাশরুম চাষ ঘরের কাছে গিয়ে দেখি, একজন লোক ভেজা ধানের খড় রোদে শুকাচ্ছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: আচ্ছা, ড. সাইদ সাহেব কে?
তিনি বললেন-
: আমিই সাইদ।
একটু অবাক হলাম। একজন বিশেষজ্ঞ ডক্টর লুঙ্গি মালকোচা করে কৃষকের মতো কাজ করছেন! সন্দেহ দূর করতে আমি কোমলকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম-
: আপনি কোথায় পিএইচডি করেছেন?
এবার তিনি বিরক্ত হলেন এবং ক্ষেপে গিয়ে বললেন-
: এখানে অনেক বেকুব ঘুরে বেড়ায়, তারাই আমাকে নিয়ে এরকম মশকরা করে।
একজন লোক দূর থেকে আমার ও সাইদ সাহেবের কথোপকথন শুনে মৃদু হাসছিলেন। সাইদ সাহেব অন্য একটা কাজে দূরে যাওয়ার পর সুহাস্য বদনে লোকটি আমার নিকটবর্তী হলেন। আমি বললাম-
: এটি তো মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠান!
তখন লোকটি বললেন-
: এ ধরনের কথায় সাইদ ভাই কিছু মনে করেন না। আসলে গবেষণার সব কাজই সাইদ ভাই করেন। তাকে দিয়ে সবাই পিএইচডির কাজ করিয়েছে তো, তাই তাকে সম্মানিত করতে তাকে নিয়ে এ ধরনের মশকরা করা হয়।
এখানে কজন কর্মকর্তা আছেন- জানতে চাইলে লোকটি তিনজন অফিসারের নাম বললেন। তারা সবাই ডক্টর। মাশরুম চাষ সম্পর্কে আমার যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা মাটির প্রদীপের মতো ধপ করে নিভে গেল। ফেরার সময় অভ্যর্থনা কেন্দ থেকে কয়েকটি মাশরুম ফার্মের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করলাম। সারা বছরই মাশরুমের বীজ পাওয়া যায়, এমন একটি ফার্মে ফোন করতেই ভদ্রলোক বললেন-
আমার কাছে কোনো মাশরুমের বীজ নেই।
আক্ষেপের সুরে বললাম-
: ঢাকা থেকে এত কষ্ট করে এলাম, সামান্য মাশরুম বীজ নিয়ে যেতে পারব না, তা কী করে হয়!
এবার তিনি রূঢ় বাক্য প্রয়োগ করে বললেন-
: শুনুন ভাই, ওখানে অনেক ডক্টর পয়দা হয়েছে, আপনার যা বলার দরকার- তাদের বলুন।
মাশরুম ফার্মের মালিকের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে উনি খুব বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বুঝাতে চাইলেন, জাতীয় মাশরুম কেন্দ্রে যা হয়, তা নিছকই লোক দেখানো। সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের কথা বলে এরা বিশাল বিশাল প্রকল্প আনে আর টাকা-পয়সা যেভাবে মন চায়, খরচ করে। ঊর্ধ্বতন মহলকে তুষ্ট করে এরা প্রায় একযুগ ধরে সাভারেই অবস্থান করছেন। চাকরির পাশাপাশি সাভারে জায়গা-জমি বাড়ি-গাড়ি করেছে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। যা হোক, কিছু মাশরুম বীজ কেনার ইচ্ছা নিয়ে আবারও তথ্যকেন্দে গেলাম। আমার অনুনয়-বিনয়ে মুগ্ধ হয়ে রিসিপসনিস্ট এক ভদ্রলোককে ডাকলেন। তিনি আমার চাহিদা শুনে ১০টি প্যাকেট মাশরুম বীজ দিলেন। বিনিময়ে ৮০ টাকা পরিশোধ করলাম, কিন্তু কোনো রশিদ পেলাম না। আমি বললাম- : আমি আগেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে মাশরুম বীজ ক্রয় করেছি। কিন্তু বিনা রশিদে নয়।
ভদ্রলোক বললেন-
: কী করব ভাই, আমরা অফিসের সামান্য কর্মচারী। কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম।
এসব বিষয় দেখার কেউ কি আছে দেশে? এ ব্যাপারে খামার বাড়ির বড় কর্তারা কিছু বলবেন কী?
-অরুণ সারথি, রূপনগর আবাসিক এলাকা, মিরপুর, ঢাকা
Source: http://www.jugantor.com
Date: 14/01/2014
No comments:
Post a Comment